জয়পুরহাট পৌর শহরের কাশিয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত হযরত ফাতেমা (রা:) কওমি হাফেজিয়া বালিকা মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল হক ফেন্সিকে গ্রেফতার করেছে জয়পুরহাট থানা পুলিশ।
রোববার (২৩ জুন) বিকালে জয়পুরহাট শহরের মাছুয়া বাজার এলাকা থেকে আজিজুল হক ফেন্সিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আজিজুল হক ফেন্সি (৬০) পৌর এলাকার বিশ্বাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানান, হযরত ফাতেমা (র:) কওমি হাফেজিয়া মহিলা মাদরাসাতে নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট উপজেলার এক অসহায় শিক্ষার্থী চতুর্থ শ্রেণিতে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে পড়াশোনা করত। ঈদের ছুটি হলেও মাদরাসাতে বেতন বাঁকি থাকায় ওই শিক্ষার্থীকে ছুটি দেওয়া হয়নি মর্মে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে । ওই শিশু শিক্ষার্থীকে কৌশলে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল হক ফেন্সির বিরুদ্ধে। রোববার মেয়েটি সুকৌশলে পালিয়ে মাদরাসার পাশে এক বান্ধবীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এসময় ধর্ষনের শিকার ওই শিক্ষার্থী তার সব ঘটনা খুলে বলেন বান্ধবীর পিতাকে। এসময় বান্ধবীর পিতা তাৎক্ষণিক ওই ছাত্রীকে জয়পুরহাট সদর থানায় নিয়ে যায়। অভিযোগ পেয়েই পুলিশ থানার পূর্ব দিকে মাছুয়া বাজার থেকে আজিজুলকে গ্রেফতার করে।
ধর্ষণের শিকার শিশু ছাত্রী বলেন, আমি চতুর্থ শ্রেণিতে মাদরাসায় পড়াশোনা করি। আমার পিতা সময়মতো মাদরাসার খরচের টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। এর মধ্যে কোরবানির ইদ উপলক্ষ্যে মাদ্রাসা ছুটি ঘোষণা করা হয়। আমার টাকা বাঁকী ছিল। বাড়ি গিয়ে যদি আর না আসি সেজন্য টাকা পরিশোধ না করে বাড়িতে যেতে দেয়নি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল হক ফেন্সি। এরপর তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। আমি তাকে বাবা ডেকেও রেহাই পাইনি। রোববার কৌশলে পালিয়ে গিয়ে মাদরাসার পাশে এক বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। সেখানে বান্ধবীর বাবা আমার কাছ থেকে শোনার পর থানায় নিয়ে আসে। আমি পুলিশকে বলেছি আমার সর্বনাশকারী বিচার চাই।
গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে আজিজুল হক ফেন্সি কখন বলেন তার ভুল হয়েছে। আবারও কখনও বলছেন ষড়যন্ত্র করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জয়পুরহাট সদর থানার উপপরিদর্শক রুবেল হোসেন জানান, রোববার দুপুরের দিকে দুজন মহিলা ও একজন পুরুষ ছোট এক মেয়েকে থানায় আসে। এরপর তাদের কাছ থেকে জানতে পারি শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়েছে । যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি শহরের কাশিয়াবাড়ি এলাকায় একটি বালিকা কওমি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল হক ফেন্সি। তিনি ওই ছাত্রীর বেতন বাকী পরিশোধ না করা পর্যন্ত আটকে রেখে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে। কয়েকদিন পর আজ শিশুটি কৌশলে পালিয়ে গিয়ে এক বান্ধবীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আজিজুল হক ফেন্সিকে মাছুয়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর আজিজুল হক ফেন্সি প্রাথমিক পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদে সে ভুল স্বীকার করে শিশুটিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানায় পুলিশ ।
জয়পুরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হুমায়ুন কবীর বলেন, মেয়েটির মুখে বিষয়টি জানতে পেরেই তাৎক্ষণিক শহরের মাছুয়া বাজার এলাকা থেকে আজিজুল হক নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, এটি একটি সমাজিক ক্রাইম। এসব অপরাধীদের কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে জয়পুরহাট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলেও জানান ওসি।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর