সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে মরুভূমির ফল রকমেলন। রকমেলন চাষে অল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করছে। তাছাড়া সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদাও রয়েছে বাজারে।
উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন প্রচেষ্টা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে রকমেলন ফল চাষ করে লাভবান হন। এ বছরও তিনি ২০ শতাংশ জমিতে জাম্বু জাতের রকমেলন চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছেন। ২০ শতাংশ জমিতে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হলেও রকমেলন বিক্রি করেছেন ৭২ হাজার টাকার। ২৭ হাজার টাকা নিট লাভ করেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, একটি রকমেলনের ওজন ২ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া বাজারে বড় ফল ৮০ টাকা ও মাঝারি ফল ৫০ টাকা কেজি করে বিক্রি হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, বীজ রোপণ থেকে রকমেলন উত্তোলন পর্যন্ত প্রায় ৭০ দিন সময় লেগেছে তার। যা অন্য যে কোনো ফসলের তুলনায় খুবই স্বল্প সময়ে একটি লাভজনক ফসল রকমেলন। আগামীতে আরো বেশি জমিতে ফসলটি চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
আরেক কৃষানি ফরিদা বেগম বলেন, তিনি ১৫ শতক জমিতে রকমেলন চাষ করে প্রায় ২০ হাজার টাকা লাভ পেয়েছেন।
ভায়ড়া গ্রামের কৃষক সোহাগ হোসেন জানান, ১৬ শতাংশ জমিতে রকমলেন ফল চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন তিনি। ১৬ শতাংশ জমিতে রকমেলন উৎপাদনে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা এবং বিক্রি করেছেন প্রায় ৪৫ হাজার টাকার। খুলনার এক ব্যাপারী তার ক্ষেত থেকেই ২ হাজার টাকা মন দরে উক্ত রকমেলন কিনে নিয়ে গেছে। এতে প্রায় ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান জানান, রকমেলন পুষ্টিগুণে অনন্য। বিভিন্ন এন্টি-অক্সিডেন্ট সম্পন্ন এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ এবং সি, যা উচ্চ রক্তচাপ, এজমা কমিয়ে দেয়। এতে উপস্থিত বেটা ক্যারোটিন ক্যান্সার রোধ করে।
উন্নয়ন প্রচেষ্টার কৃষি কর্মকর্তা নয়ন হোসেন জানান, পল্লি কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহযোগিতায় ও উন্নয়ন প্রচেষ্টার সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আওতায় কৃষি খাতভুক্ত মালচিং পেপার দিয়ে উচ্চ মূল্যের ফসল হিসেবে রক মেলন চাষ হয়েছে। এটা সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার ভায়রা, তেঁতুলিয়া ও নগরঘাটা ইউনিয়নের ৫ জন কৃষককে রকমেলন চাষের উপর উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়ার পর বাণিজ্যিকভাবে ফসলটি চাষ করেছেন তারা। চাষিরা বলেন প্রতিটি রকমেলন ২ থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত ওজন হয়েছে। এটি নতুন ফসল হলেও প্রত্যেক কৃষক লাভবান হয়েছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। তাদের এই রকমেলন চাষ দেখে অনেক কৃষক আগ্রহ দেখাচ্ছে আগামীতে চাষ করার জন্য। অনেকে বিদেশি এই ফলের চাষ সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নিতে আসছেন।
তালা উপজেলা কৃষি অফিসার হাজিরা খাতুন বলেন, অত্র উপজেলাতে কয়েকজন কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে রকমেলন চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। তবে স্বল্প সময়ের লাভজনক একটি ফসল এটি। রকমেলন যদিও এটি মরু অঞ্চলের ফসল। অত্র অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া সব ধরনের ফসলের উপযোগী। তাই আগামীর জন্য সম্ভাবনাময় বলা যেতে পারে ফসলটি।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর