![BD24LIVE.COM](https://www.bd24live.com/bangla/public/logo-bd24live.png)
বগুড়ায় কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে আসামি পালানোর ঘটনা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। এর আগে এ ধরনের ঘটনা বিরল। জনমনে প্রশ্ন, আসামিরা কীভাবে সাধন করলেন এমন অসাধ্য কাজ? নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের বরাতে যা জানা যাচ্ছে, তা রীতিমতো সিনেমা।
বুধবার (২৬ জুন) ভোরে কারাগারের জাফলং ভবনের কনডেম সেলের চার আসামি পালিয়ে কারাগার থেকে পালিয়ে গেলেও মাত্র ১৪ মিনিটের মাথায় পুলিশ তাদেরকে আটক করে।
ওই আসামিরা হলেন- কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী থানার আজিজুল হকের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম মঞ্জুর (৬০), বগুড়া জেলার সদর থানার মো. ইসমাইল শেখের ছেলে মো. ফরিদ শেখ (২৮), কাহালু থানার মো. আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. জাকারিয়া (৩১) ও নরসিংদী জেলার মাধবদী থানার ইসরাফিল খার ছেলে আমির হামজা (৩৮) ।
জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, বালতির হাতল ব্যবহার করে প্রায় এক মাসের চেষ্টায় কারাগারের চুন-সুরকির ছাদ ফুটো করে ওই চার ফাঁসির আসামি পালিয়ে গিয়েছিল।
কারাগার থেকে আসামিদের পলায়নের ঘটনা বর্ণনা করে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘তারা চারজনই সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কাজটি করেছে। আসামিরা অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছে। ভবনটি বেশ পুরানো। তারা প্রায় এক মাস ধরে এই পরিকল্পনা করেছে। তারা বালতির হাতল লোহা বা স্টিল নির্মিত সেটি সোজা করে ছাদের অংশ ফুটো করেছে। ধারাবাহিকভাবে তারা এটি করেছে। ভবনটিতে কোনো রড ছিল না। ইট-সুরকির অনেক পুরনো ভবন। ফুটোটি তারা ধীরে ধীরে বড় করেছে। এ ছাড়া পুরনো চাদর, গামছা ও কাপড় পর্যায়ক্রমে বেঁধে ছাদ পর্যন্ত একটি রশির মতো তৈরি করে। একটি পাটাতন তৈরি করে। মূলত পাটাতরে পাড়া দিয়ে রশি বেয়ে ছাদের ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘এরপর ছাদ নেমে প্রিজন সেলের সামনে একটি উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ আছে। সেটি লোহার খাঁচা দিয়ে বদ্ধ। সেই লোহার খাঁচার ওপর দিয়ে ক্রলিং করে কারাগারের প্রাচীরের কাছে যায়। এবং একইভাবে কাপড় জোড়া দিয়ে রশি তৈরি করে প্রাচীর টপকে যায়। তারপর পাশের করতোয়া নদীর উপর যে ব্রিজ ছিল, সেটি দিয়ে পাশের চাষিবাজারে পৌঁছে যায়।
জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘এই ভবনে পাশাপাশি চারটি ফাঁসির আসামিদের প্রকোষ্ঠ রয়েছে। এর একটিতে এই চারজন ছিলেন। আসামিরা ছাদের যে জায়গাটি ফুটো করার জন্য বেছে নিয়েছে সেটি বাইরে থেকে দেখা যায় না। কারারক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিতে তারা ওই কর্নারের অংশটি বেছে নিয়েছিল।’
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আসামিরা পালিয়ে যাওয়ার পর আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল তাদের আটক করা। আমরা মাত্র ১৪ মিনিটের মাথায় তাদের আটক করতে সক্ষম হই। এটা একটা প্রাথমিক স্বস্তির বিষয়।’
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বগুড়া কারাগার ব্রিটিশ আমলে তৈরি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে ভবনের অনেক স্থান খারাপ। ওই চার আসামিকে এ বছরের ১ জুন বিভিন্ন কারাগার থেকে বগুড়ায় নিয়ে আসা হয়। আজকে পরিদর্শনের সময় দেখেছি, ওরা পুরাতন এবং নাজুক ছাদের যে অংশে ফুটো করেছে সেখানে ছাদে কোনো রড ছিল না। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি ছিল ওটা। আমরা এসব স্থান সংস্কারের কথা বলেছি। এছাড়া যেদিক দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে আসামিরা সেখানে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল কায়েসকে প্রধান করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি এম ইমরুল কায়েসকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটিতে জেলা পুলিশ সুপারের একজন, র্যাব, ডিআইজি প্রিজন, ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ও গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী বা তার প্রতিনিধি থাকবেন।
জেলা প্রশাসক জানান, তদন্তের জন্য কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি তবে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি ডিআইজি প্রিজনকে দেওয়া হবে। তার ওপর ভিত্তি করে কারাগার কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেবেন।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর