২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৯৭৩ কোটি ৫ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করা হয়।
বুধবার (২৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরি সিনেট ভবনে বিকেল থেকে চলমান বাজেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমেদ চলতি অর্থ বছরের বাজেট ও গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট উপস্থাপন করেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সিনেট চেয়ারম্যান ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন জানান, নতুন অর্থবছরে বাজেটের আকার কমেছে। তবে এবার গবেষণা খাতে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ২ দশমিক ১২ শতাংশ যা গত দুই অর্থবছরে ছিল ১৫ কোটি টাকা, মোট বাজেটের ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। পাশাপাশি উদ্ভাবনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকা।
বাজেটে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেতন-ভাতায় বরাদ্দ বেড়েছে। বেতনে খরচ দেখানো হয়েছে ২৯৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ৩১.৬৫ শতাংশ। বিভিন্ন ভাতা বাবদ ২১৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং পণ্য ও সেবা খাতে ২২০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে যা যথাক্রমে বাজেটের ২৩.১২ শতাংশ ও ২৩.৩৩ শতাংশ, অর্থাৎ বাজেটের ৭৮ শতাংশই এই খাতগুলোতে ব্যয় হবে। গত বছর এসব খাতে ৭৬ শতাংশ খরচ দেখানো হয়েছিল।
নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ৯৪৫ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার বাজেটে ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা আয় হবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুদান থেকে, যা মোট আয়ের ৮৫.১১ শতাংশ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় দেখানো হয়েছে ৯০ কোটি টাকা (বাজেটের ৯.৫২ শতাংশ), যা গতবার ছিল ৮৫ কোটি টাকা। ফলে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৬০ কোটি ৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা, যা মোট বাজেটের ৬.৫৮ শতাংশ। এবার ঘাটতি ৫০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, যা মোট বাজেটের ৫.৩৭ শতাংশ।
এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা ছিল ১১৩১ কোটি ১৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বরাদ্দ দিয়েছে ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দের পরিমাণ ৩২৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৪ হাজার টাকা কম।
অধিবেশনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে তার ভাবনাকে বাস্তবে রূপদানের কাজ শুরু করেছিলেন। পরবর্তীকালে ক্রমান্বয়ে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের মূল চেতনা সংকুচিত হতে থাকে। এর মূল কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক স্বায়ত্তশাসন না থাকা। এক্ষেত্রে সরকারের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল থাকায় স্বাধীনভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায়ও আমরা আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করতে পারিনি।
এমনকি, বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন খাত থেকে যা আয় করে, সেই পরিমাণ অর্থ বাজেট প্রণয়নের সময় বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় দিয়ে থাকে। অথচ একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে হলে নতুন নতুন উদ্ভাবনের দিকে আমাদের দৃষ্টিপাত করতে হবে। সরকারের সহযোগিতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বৃদ্ধি করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অধীনে গবেষণা কার্যক্রমকে আরো উৎসাহিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।
এর আগে, বেলা তিনটায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ২০২৪-২৫ বার্ষিক বাজেট অধিবেশন। বাজেট অধিবেশনের সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার।
অধিবেশনের শুরুতে সম্প্রতি প্রয়াত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শিক্ষক, বাংলাদেশ ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর