• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ০১ জুলাই, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ৫৭ সেকেন্ড পূর্বে
প্রচ্ছদ / জাতীয় / বিস্তারিত
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ২৯ জুন, ২০২৪, ০৯:০৩ সকাল
bd24live style=

বিসিএসে প্রথম হওয়া সাকলায়েনের জীবন ছিল সফলতায় পরিপূর্ণ

ছবি: সংগৃহীত

গোলাম সাকলায়েন শিথিল। ৩০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন তিনি। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামের পদ্মার পাড়ে জন্ম। তার স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়া পর্যন্ত যে গ্রামে পৌঁছেনি বিদ্যুতের অালো। শৈশব আর দুরন্ত কৈশরটা কেটেছে সেখানেই। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার ও বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গোলাম সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত চেয়েছে মন্ত্রণালয়।

পরীমনির সাথে অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে সমালোচনায় আসলেও তিনি মূলত অত্যন্ত মেধাবী একজন মানুষ, সফলতার গল্পে ভরা তার জীবন। ৩০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। যোগ দেওয়ার পর পুলিশ একাডেমিতে বুনিয়াদী প্রশিক্ষণেও হয়েছিলেন সেরা, পেয়েছিলেন বেস্ট প্রবিশনারি অ্যাওয়ার্ড, বেস্ট একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড। 

পেশাগত দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস্টার্স অব পুলিশ সায়েন্সেও হয়েছিলেন প্রথম। পেশাগত দক্ষতার জন্য তিনি যে আরও অনেক পুরস্কারই পাবেন, সেটিও ছিল অনুমিত। সর্বশেষ সাহসিকতা ও দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যে পদক বিতরণ করেছেন, তাতেও তাই স্বাভাবিকভাবেই ছিল তার নাম। পেয়েছেন রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)।

জীবনের একটা পর্যায়ে এসে এমন সাফল্য আর স্বীকৃতি একের পর এক ধরা দিলেও গোলাম সাকলায়েনের জীবনের উত্থানের পথ একটা মসৃণ ছিল না। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় পদ্মার পাড়ে মোক্তারপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া বেড়ে ওঠার গল্পটাও ছিল সংগ্রাম মুখর। মেধা আর পরিশ্রমে অবশ্য সব প্রতিকূলতা জয় করেই আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছেন তিনি।

তিনি ২০০১ সালে সারদা সরকারি পাইলট একাডেমি হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৬৩ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। জিপিএ ৫ না পাওয়ার আক্ষেপটা ছিল। কিন্তু তার গ্রামের জন্য এটিই ছিল অভাবনীয় ফল। পরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে।

উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে সাকলায়েনকে। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া সাকলায়েনের বাবা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মেরুদণ্ডের সমস্যা থাকায় চিকিৎসার পেছনে খরচ হতো অনেক অর্থ। সাকলায়েনকে তাই রাজশাহীতে মেসে রেখে পড়ানোর সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। প্রতিদিন সাইকেলে করে চারঘাট থেকে রাজশাহীতে এসে কলেজ করতেন।

সাকলায়েন বলেন, আমাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। এলাকায় প্রাইভেট পড়ারও প্রচলন ছিল না। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাস আয়ত্তে আনতে পারছিলাম না। বিশেষ করে গণিত একদমই দুর্বোধ্য ছিল আমার কাছে। পরে পরীক্ষার আগে একমাস গণিত প্রাইভেট পড়িয়েছিলেন নজরুল স্যার। সেটুকু ভরসা করেই এইচএসসি পাস করেছি। স্যার না পড়ালে হয়তো এইচএসসিতে পাসই করতে পারতাম না। স্যারের এই অবদানের সঙ্গে তাই কোনোকিছুরই তুলনা হয় না।

কেবল ক্লাস করা নয়, এইচএসসি পরীক্ষাও সাকলায়েনকে দিতে হয়েছে চারঘাট থেকেই। এত সব মিলিয়ে এইচএসসির ফলটাও আশানুরূপ ছিল না, পেয়েছিলেন জিপিএ ৩ দশমিক ৮০। 

এর মধ্যে সাকলায়েন জানতে পারেন, এইচএসসির পর সামরিক বাহিনীতে কমিশন পদের জন্য আবেদন করা যায়। করলেন সেটাও। সেখানে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন ৫৯ লং কোর্সে। কিন্তু দুরন্ত শৈশব-কৈশোর কাটানো সাকলায়েনের কাছে সামরিক বাহিনীর নিয়মতান্ত্রিকতা মেনে নেওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ছিল। বন্ধু হয়ে পাশে থাকা মাকে সে কথা জানালে তিনিই ছেলেকে ফিরিয়ে আনেন মিলিটারি একাডেমি থেকে। ছেলেও ফিরে যায় দুরন্ত জীবনে। একটা বছর কেটে যায় হেলাফেলায়।

এর মধ্যে বন্ধুরা সবাই যে যার মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হলে টনক নড়ে সাকলায়েনের। প্রস্তুতি নিয়ে অংশ নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়। ১৪টি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ১৩টিতেই উত্তীর্ণ হলেও নিজের পছন্দের ইংরেজি বিভাগেই অকৃতকার্য হন। পরে সবার পরামর্শে ভর্তি হন সমাজবিজ্ঞান বিভাগে, ভর্তি পরীক্ষায় এ বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন তিনি।

ক্লাস শুরু করেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং সেন্টারে সাধারণ জ্ঞানের শিক্ষক হিসেবেও যোগ দেন। এসময় শুরু করেন টিউশনি। নিজে কখনও প্রাইভেট পড়ার সুযোগ না পেলেও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ছয় বছর পড়িয়েছেন গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের সন্তানদের, বিনামূল্যে কিনে দিয়েছেন বই। তার পড়ানো প্রায় ৫০০ ছেলে-মেয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন।

সাকলায়েন চতুর্থ বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষার পর ফল পাওয়ার আগেই ‘অবতীর্ণ’ বা ‘অ্যাপিয়ার্ড’ হিসেবে আবেদন করেন ৩০তম বিসিএসে। সাকলায়েন বলেন, চয়েজ ফর্ম নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম, কিছু বুঝতাম না। অর্থনীতি বিভাগের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ হয়। তিনি জানান, সবচেয়ে ভালো ফরেন ক্যাডার। কিন্তু সেখানে চান্স পেতে হলে সুদর্শন, স্মার্ট ও ইংরেজিতে ভালো হতে হবে। ভেবে দেখলাম, এর কোনোটিই আমার নেই। পরে কিছু না বুঝেই প্রথম চয়েজ দিয়েছিলাম পুলিশ ক্যাডার। ইংরেজি ভালো না বলতে পারলেও বেসিকটা ভালো ছিল। উচ্চ মাধ্যমিকে গণিত নিয়ে ঝামেলা হলেও গণিতের বেসিকটাও ভালো ছিল। এর মধ্যে নিজে কোচিংয়ে পড়াতাম সাধারণ জ্ঞান। তাই বাংলা আর বিজ্ঞানটা বেশি বেশি পড়লাম। প্রিলিমিনারি পরীক্ষাতেও টিকে গেলাম। পরে আর আটকাতে হয়নি কোনো ধাপেই।

এদিকে, ৩০তম বিসিএসের কার্যক্রম যখন চলছে, এরই মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের পরীক্ষায় প্রথম হন সাকলায়েন। একইসঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবেও টিকে যান, যোগ দেন সেই চাকরিতেই। পোস্টিং হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সে অবস্থাতেই অংশ নেন ৩০তম বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষায়। কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন সে পরীক্ষাতেও।

৩০তম বিসিএসের ফলপ্রকাশের দিন ব্যস্ত ছিলেন গোলাম সাকলায়েন। তিনি বলেন, এক কাজিন জানালো বিসিএসের ফল প্রকাশিত হয়েছে। অফিসের কম্পিউটারে বারবার চেষ্টা করেও পিএসসির (সরকারি কর্ম কমিশন) ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারিনি। অনেক চেষ্টার পর ঢুকলাম, বিসিএসের ফলও পেলাম। শুরুতেই শিক্ষা ক্যাডারে চেক করে রোল পেলাম না। বেশ হতাশ হয়ে গেলাম। মনে হলো, বিসিএসটা হলো নাং! আরও দুয়েকটা ক্যাডার দেখে পুলিশ ক্যাডারে ঢুকতেই দেখি শুরুতে আমার রোল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কেমন ঘোর লাগা অনুভূতি। এর মধ্যেই ফোন করি মাকে। শুনেই কেঁদে ফেলেন। মা সবসময় বলতেন তুমি বিসিএসে প্রথম হবে। শেষ পর্যন্ত মায়ের সেই কথাই সত্যি হলো।

এরপর শুরু সারদা পুলিশ একাডেমিতে বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ। এবার অবশ্য বাড়ির পাশে হওয়ায় আর পালাতে হয়নি। তাই মন দিয়েই নিয়েছেন প্রশিক্ষণ, মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করে তাতে হয়েছেন প্রথম। বেস্ট প্রবেশনারি অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করে পরে পেয়েছেন বেস্ট একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড। বিভাগের সবার পরামর্শে পেশাগত দক্ষতার তাত্ত্বিক জ্ঞান বাড়িয়ে নিতেই একসময় ফের ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, পুলিশ সায়েন্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে। সেখানেও প্রথম হন তিনি।

তবে এসব পরিশ্রম আর অর্জন এখন অনেকটাই ম্লান হয়ে পড়েছে অভিনেত্রী পরীমনির সঙ্গে জড়িয়ে। সাকলায়েন সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে গত ১৩ জুন পিএসসিকে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদাচরণের’ কারণে সাকলায়েনকে ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, সাকলায়েন ডিবির গুলশান বিভাগে থাকার সময় নায়িকা পরীমনির সঙ্গে ঘটনাক্রমে তার দেখা হয় এবং যোগাযোগ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নায়িকা পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন। তদন্তকারীরা দেখেছেন, ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে পরের এক মাসে সাকলায়েন বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমনির বাসায় অবস্থান করেছেন।

বাঁধন/সিইচা/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com