
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পেজের নাম ‘নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়’। পেজের প্রোফাইলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো।পেজটি থেকে নিয়মিত আপলোড হচ্ছে তরুণ-তরুণীদের কুরুচিকর টিকটক ভিডিও। এসব ভিডিও আবার মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে।
ফেসবুকে রীতিমতো হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের ফেসবুক পেজ থেকে শিক্ষা,গবেষণা, উন্নয়ন এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রচারিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রচারিত হচ্ছে রুচিহীন টিকটক ভিডিও। ‘নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের ভুয়া পেজ থেকে ঘটানো হচ্ছে এমন কাণ্ড।
পেজটি ঘুরে দেখা যায়, ‘হিরো আলমের ছোট ভাই এখন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে’,‘সাজন সাহার ছোট বেলার ভিডিও’,‘নজরুল ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর বন্ধু যখন নিব্বিকে ছেড়ে দেয়’, ‘নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনোজ প্রামাণিক সাদিয়ার সাথে যা করল’, ‘ভলিবলের রেফারিগিরি করছে টিকটকাররা’, ‘বড় ভাই ঈদ এসে গেল’,‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র গাবতলীর হাটে’ এধরনের ফানি ক্যাপশনে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের রুচিহীন সস্তা কন্টেন্ট,ভিডিও এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য আপলোড হচ্ছে।মুহূর্তেই এসব ভিডিওতে পড়ছে নানা ধরনের সমালোচনামূলক মন্তব্য।
শুধু ‘নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়' নামের পেজটিই নয়। ফেসবুকে ‘নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়' লিখে সার্চ দিলে বাংলা, ইংরেজিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে প্রায় ২০ টিরও বেশি পেজ আসছে। মাত্র দুইটি পেজ ছাড়া কোনোটির সাথেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এসব ভুয়া পেজ থেকে প্রতিনিয়ত প্রচারিত হচ্ছে নানা ধরনের খণ্ডিত,বিভ্রান্তিকর এমনকি সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক তথ্য ৷ এই পেজগুলো বন্ধের ব্যাপারে উদাসীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে এসব ভুয়া পেজ চলমান থাকলেও নেওয়া হয়নি কোনো ধরনের ব্যবস্থা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এসব ভুয়া পেজ থেকে প্রকাশিত কন্টেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পেজগুলো বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সংশ্লিষ্টদের।
হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ২য় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই এসব টিকটক ভিডিও ধারণ হচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে এসব ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা আমাদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করছে। এসব বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব ইবনে সাদি বলেন ‘ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এত এত পেজ যে মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হয়ে যাই কোনটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল আর কোনটা নকল পেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভুয়া পেজগুলো বন্ধের জন্য প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে।'
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন ‘এ ধরনের কার্যক্রম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচকতা তৈরি করছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথাযথ তদারকি ও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি বলেন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোন কার্যক্রম আমাদের সামনে পরিলক্ষিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে আমরা তাৎক্ষণিক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ রয়েছে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়া বাইরের কোনোকিছু আপলোড করার সুযোগ নেই। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভুয়া পেজ/আইডি খুলে এমনটি করে থাকতে পারে। টেকনিক্যাল টিমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ব্যবহৃত ভুয়া পেজ/আইডি গুলো শনাক্ত করে সেগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর