২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জন্য ৩১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭৯ কোটি ১২ লাখ টাকা দেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাত থেকে আসবে ৩৯ কোটি ৩২ লাখ। বাজেটে মোট ঘাটতি থাকবে ৭৭ কোটি ৮৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
শনিবার (২৯ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে আয়োজিত ৪১ তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে বাজেট উপস্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত মূল বাজেটে বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৮৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা (যা মোট বাজেটের ৬৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ)। এছাড়া পেনশন ও অবসর সুবিধা বাবদ রাখা হয়েছে ৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকা (মোট বাজেটের ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ)। এই দুই খাতে মোট বরাদ্দ ২২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা যা মোট বাজেটের ৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এছাড়া গবেষণা ও উদ্ভাবনে ৭ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মোট বাজেটের মাত্র ২.৪৫ শতাংশ।
তবে বাজেটে গুরুত্ব পায়নি শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট খাতসমূহ। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ০.১৫ শতাংশ। বাজেটে ছাত্র কল্যাণ তহবিলে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জন্য রাখা হয়েছে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ। বৃত্তি ও পিএইচডি প্রোগ্রাম বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা যা মোট বাজেটের ১.২০ শতাংশ, গ্রন্থাগারে বরাদ্দ ৩ কোটি ৮ লাখ ১২ হাজার টাকা (০.৯৬ শতাংশ) দেওয়া হয়েছে। যা শিক্ষার্থীদের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়া গবেষণা খাতে নামে মাত্র বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের মাত্র ২.৪৫ শতাংশ। শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ কেন্দ্র ৭৮ লাখ ৫৮ হাজার, খেলাধুলা ও পাঠ বহির্ভূত কার্যক্রম বাবদ মাত্র ৩৩ লাখ টাকা (০.১০ শতাংশ)।
এছাড়া শিক্ষকদের গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য বরাদ্দ থাকলেও শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হয়নি আলাদা কোনো বরাদ্দ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার সিংহভাগই চলে যাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাতা বাবদ। তাই এই অর্থ দিয়ে শিক্ষার্থীদের চাহিদা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয়।’ বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণাবন্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন বাজেট বিশ্লেষকরা।
বাজেটের আয়ের খাত হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৭৯ কোটি ১২ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সূত্র থেকে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
বাজেট অধিবেশনে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, বর্তমানে রাজস্ব তহবিলে ঘাটতির পরিমাণ ৬৫ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা। চলতি অর্থবছরে আনুমানিক ১২ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী সুষম বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এরূপ আর্থিক চাপের মধ্যে বাজেট প্রণয়ন আক্ষরিক অর্থেই অসম্ভব। ঘাটতির পরিমাণ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো কষ্টকর হয়ে যাবে।
সিনেট অধিবেশনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার, রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) আবু হাসান, সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিরা।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর