গত ২৮ এপ্রিল উপাচার্যের নেতৃত্বে বহিরাগতদের নিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলার সময় প্রক্টর কর্তৃক হামলার শিকার হন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম। সেসময় এই শিক্ষকের মুখে ঘুসি মারেন উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী।
পরবর্তীতে বিচার চেয়ে প্রথমে প্রশাসন বরাবর লিখিত আবেদন এবং চার বার একক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তিনি। কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে এই উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে তুলছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
এছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৯৫তম সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে ক্যাম্পাস খোলার পরপরই প্রক্টরের অপসারণের কথা থাকলেও সেটি বাস্তবায়নেও কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা বলে অভিযোগ কুবি শিক্ষক সমিতির।
রবিবার (৩০ জুন) বেলা ১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পাদদেশে চতুর্থবারের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ড. মোহাম্মদ মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম। এসময় শিক্ষক সমিতির সদস্যরাও এসে তার সাথে একাত্মতা পোষণ করেন।
শিক্ষকদের অভিযোগ, ভিসির সকল অপকর্মে সহযোগিতা করতে প্রক্টর বহিরাগতদের নিয়ে বলয় তৈরি করেছেন। এই জন্য ভিসি পুরস্কার হিসেবে তাকে ৮৭ তম সিন্ডিকেটে যাচাই-বাছাই কমিটি সুপারিশ না করলেও উপাচার্যের নির্দেশে তার পিএইচডি নথিভুক্ত করা হয় এবং বিভাগে জুনিয়র হওয়ার পরও সিনিয়রকে পদোন্নতি না দিয়ে প্রক্টরকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
এসময় ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, চতুর্থ বারের মত আমাকে এখানে দাঁড়াতে হলো। যা দুঃখজনক। বারবার দাঁড়িয়েও আমার উপর হামলাকারী এই প্রক্টরের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। যার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আইন শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, তিনিই শিক্ষকের গায়ে হাত তুলছেন। তার ইন্ধনে আমাদের অন্যান্য সহকর্মীদের গায়ে হাত তুলেছে বহিরাগত ছাত্ররা। এর কোনো কোনো বিচারও এখনও হয়নি।
তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উপর সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে এখনো কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উপাচার্য ও প্রক্টর যাদের দায়িত্ব ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিধান করা কিন্তু এই রক্ষক এখন ভক্ষক হয়েছে। আমি মনে করি প্রশাসন বিগতদিনের কর্মকাণ্ডে তার সকল যোগ্যতা হারিয়েছে। আমি প্রক্টরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, তার দ্রুত অপসারণ চাই, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই কলঙ্কজনক অধ্যায়ের অবসান চাই।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, গত ৫ জুন যে সিন্ডিকেট সভা হয় সেখানে আমরা একাধিক সূত্র থেকে জানতে পারি প্রক্টরের অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। যদিও সেটা সিন্ডিকেটের কার্যবিবরণীতে লেখা হয়নি, তবে উপাচার্য বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সাথে সাথে তাকে অপসারণ করা হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত উপাচার্য তাকে সরাচ্ছেন না এবং আমরা যখন উপাচার্যের নিকট অপসারণের দাবি নিয়ে গেলাম তখন তিনি তালবাহানা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসী কর্তৃক শিক্ষকদেরকে আঘাত করা হচ্ছে, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, বহিরাগত অস্ত্রধারী এবং মামলার আসামীদেরকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনিরাপদ করে তুলছে। তার সকল অপরাধ স্পষ্ট হওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না এই উপাচার্য। যা খুবই দুঃখজনক।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর