ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে আবার এ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করছে নির্বাচন কমিশন(ইসি)। ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য ব্যয় কমিয়ে কারিগরি উন্নয়ন করতে চায় সংস্থাটি।
রবিবার(৩০জুন) নির্বাচন ভবনে প্রযুক্তিবিদদের বৈঠক এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানাগেছে।
ইভিএমের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, রোববার ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে পরিকল্পনা কমিশনে ব্যয় না বাড়িয়ে কেবল প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। সকালেও কথা হয়েছে। এক বছর মেয়াদ বাড়বে। হয়তো কয়েকদিনের মধ্যেই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন,ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হায়দার আলী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. মাহফুজুল ইসলামের সঙ্গে আজকে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। এতে ভিভিপ্যাটযুক্ত করা, ওজন কমানো ও ব্যয় কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডার বা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসতে পারে কমিশন। সকলের মতামত পেলে ইভিএমের কারিগরি উন্নয়নে হাত দেবে ইসি।
ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত এক লাখ ১০ হাজার ইভিএম ব্যবহার অনুপযোগী রয়েছে। আর এখন বিভিন্ন নির্বাচনে আমরা ৪০ হাজার ইভিএম ব্যবহার করছি।
ব্যয় কমিয়ে ইভিএমের কারিগরি উন্নয়ন বা ওজন কমানো যাবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন,
কারিগরি উন্নয়ন তো করা যাবে । তবে ব্যয় কমানো যাবে কী করে, ব্যয় হয়তো কমতে পারে।তবে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হবে। যারা ছোটখাটো সমস্যা হলে সমাধান করতে পারে। আগেও যে ইভিএম ছিল তখনো কারিগরি লোকবল নিয়ে ভাবনা হয়নি। এখনো নেই। বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজনীয় লোকবল তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন। ভিভিপ্যাট যুক্ত করা যেতে পারে।
একজন নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে বলেন,আমাদের বর্তমান যে মেশিনগুলো আছে এগুলোর ওজন অনেক বেশি। ওজন কমানোর কথা হয়েছে বৈঠকে। এছাড়া কারিগরি উন্নয়ন তথা ভিভিপ্যাট (ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল) যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া এই মেশিনগুলোর ব্যয় অনেক বেশি। প্রায় দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এটা কিভাবে কমানো যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, এটা কেবল প্রাথমিক আলোচনা। এরপর সিরিজ আলোচনা করা হবে। এজন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটির পরামর্শক্রমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
জানাগেছে, এক-এগার সরকারের সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশের ভোট ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার শুরু করে। সে সময় তারা বুয়েট থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে মেশিন তৈরি করে নেয়। ওই কমিশনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোটযন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন। পরবর্তীতে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূলের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত উন্নত মানের ইভিএম তৈরির পরিকল্পনা রেখে যায়।
২০১৭ সালে কেএম নূরুল হুদার কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক পূর্বে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টেরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেন তারা। এতে মেশিন প্রতি ব্যয় হয় দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো। হাতে নেওয়া হয় তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প।
প্রকল্প থেকে দেড় লাখের মতো ইভিএম কেনে রকিব কমিশন। প্রকল্পের সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের ব্যবস্থা না থাকায় সেই উন্নত মানে ইভিএম মেয়াদ ১০ বছর হলেও পাঁচ বছর যেতে না যেতেই অকেজো হওয়া শুরু করে। কন্ট্রোল ও ব্যালট ইউনিট মিলে একটি সেট, যা একটি ইভিএম হিসেবে ধরা হয়।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর