বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সুনামগঞ্জের ৫ গুণীজনকে ‘জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা ২০২৩’ প্রদান করা হয়েছে।
রবিবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসনরাজা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গুণীজনদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেয়া হয়।
সম্মাননাপ্রাপ্ত গুণীজনেরা হলেন- সৃজনশীল সংস্কৃতি গবেষক ক্যাটাগরিতে দীপক রঞ্জন দাস, সৃজনশীল সংগঠক ক্যাটাগরিতে বিজন সেন রায়, লোকসংস্কৃতি ক্যাটাগরিতে মো. নেসারুদ্দিন, কণ্ঠসংগীতে মো. শাহজাহান সিরাজ ও যন্ত্রসংগীত ক্যাটাগরিতে মো. কুতুব উদ্দিন।
এই ৫ গুণী সুনামগঞ্জের সংস্কৃতি, সাহিত্য ও শিল্পের নানা শাখায় দীর্ঘদিন ধরে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শামছুল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরীর সঞ্চালনায় সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর সম্পাদক পঙ্কজ কান্তি দে প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, গুণীজনদের সম্মাননা দেওয়া দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ও সংস্কৃতির বিকাশে তাদের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে। যে সমাজ গুণীজনদের সম্মান দিতে জানে না সে সমাজে গুণীর জন্ম হয় না। যাঁরা কর্মের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখেন তাদের কর্মের স্বীকৃতি দিলে আগামীর প্রজন্ম সৃজনশীল কর্ম সম্পাদনে উৎসাহিত হবে। একটি সুন্দর উন্নত সমাজ বিনির্মাণে সুস্থধারার সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি ইতিবাচক কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে।
সংবর্ধিত ও সম্মাননাপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাশ বলেন,লোকসাহিত্যে সুনামগঞ্জ সমৃদ্ধ। কিন্তু ঐতিহ্যের প্রতি অবহেলার কারণে আজ তা সংরক্ষিত নয়। যারা লোকসংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তারাই লোকসাহিত্যের স্রষ্টা। তিনি বলেন,অনেক প্রকারের লোকসংস্কৃতি রয়েছে। যেমন শিশুসাহিত্য। শিশুরা কবিতা, ছড়া, রচনা লেখালেখি করে। মেয়েরাও লোকসাহিত্যের আলোকে লেখালেখি করেন। আছে লোকনাট্য ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজন্মের কথা চিন্তা করে লোকসাহিত্যকে সংরক্ষণ করা উচিত।
সংবর্ধিত ও সম্মাননাপ্রাপ্ত দৈনিক সুনামকণ্ঠ র সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায় বলেন, আমরা যখন সংগঠন করতাম, তখন আমাদের সিনিয়র নেতা কমরেড বরুণ রায়, নজির হোসেন, আলফাত উদ্দিন মুক্তার সাহেবের কাছ থেকে শিখেছিলাম। তারা বলতেন, সংগঠন করলে যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে এবং কথায় ও কাজে মিল রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, আজকের দিনে সংগঠন করা মানে ধনপতি হওয়া। কিন্তু, এটা একজন সংগঠকের পক্ষে কখনও সঠিক নয়। এই আয়োজনের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, ২০১৭ সালে হাওরের বাঁধ নির্মাণকাজে দুর্নীতি হওয়ার কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে ধান তলিয়ে যায়। এ কারণে হাওরবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০২২ সালেও ভয়াবহ বন্যায় অনেক ক্ষতি হয় জেলার মানুষের। কিন্তু ২০১৭ সালের পর হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের সোচ্চার অবস্থানের কারণে দুর্নীতি অনেকটা কমে আসে। এতে আজকের সম্মাননাপ্রাপ্ত সংগঠক বিজন দা’র মতো অনেকের অবদান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে-সব লেখক তাদের বই প্রকাশ করতে পারছেন না। আমরা তাদের বই প্রকাশের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ বলেন, যে সমাজ বা রাষ্ট্রে গুণী ব্যক্তিদের সম্মান জানানো হয় না। সেই সমাজ বা রাষ্ট্রে গুণী ব্যক্তির জন্ম হয় না। তিনি এমন সম্মাননা অনুষ্ঠানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরি বলেন, সুনামগঞ্জ সংস্কৃতির জেলা। আজকে সম্মাননাপ্রাপ্ত গুণীজনেরা জেলার সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তারা শিল্প-সংস্কৃতিতে নানাভাবে কাজ করছেন। তাদেরকে সম্মাননা দিতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এই জেলায় অনেক গুণী ব্যক্তি রয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সকল গুণী ব্যক্তিদের সম্মাননা দেয়া হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর