টাঙ্গাইলের সখীপু্রের মানবপাচারকারীর খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়ে দিশেহারা দুই যুবক। ভুক্তভোগী দুই যুবক হলেন উপজেলার কালমেঘার তানভীর ও আনিস মিয়া। এ ঘটনায় এলাকার রাশেদা নামের এক নারী ও তার স্বামী রাশেদুল করিমকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগী ওই দুই যুবক।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালমেঘা সোবহান মার্কেট এলাকার রাশেদার বিয়ে হয়ে রাশেদুল করিমের নামে এক ব্যক্তির সাথে। রাশেদুলের বাড়ি টাঙ্গাইলে এলাকাবাসী শুধু এটুকুই জানতো। পরবর্তীতে রাশেদুল দম্পতির কথায় সুখের স্বপ্ন বুনে ওই দুই যুবক। সুখের খোঁজে পারি জানতে চায় সোনার হরিণ নামক ইতালি। প্রায় বছর দুই আগে রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর তানভীর দেশ ছাড়ে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমে রাশেদা দম্পতিকে দিয়েছেন সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা। আর আনিস মিয়া দিয়েছেন ৭ লক্ষ টাকা। রাশেদা ও রাশেদুল তানভীরকে প্রথমে দুবাই, তারপর সিরিয়া এবং সর্বশেষ লিবিয়াতে নিয়ে তাদের বাসাতেই প্রায় ৬ মাস কাজ করিয়েছেন। কাজ করতে অস্বীকার করলে বা ইতালির কথা বললেই ওই দম্পতি নির্যাতন করতেন দুই যুবকের উপর।
এ বিষয়ে লিবিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষরিত একটি সালিশ নামও রয়েছে তানভীরের কাছে। বিভিন্ন মাধ্যমে একাধিকবার বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দিয়েছেন রাশেদা দম্পতিকে। তার প্রমাণও দেখান তানভীর। সর্বশেষ ওই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বারের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের কথা উঠে। মেম্বারের মাধ্যমে আড়াই লাখ টাকা তানভীর ও তার বাবা মোঃ ইসমাইল হোসেনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। বাকি সাড়ে ৮ লাখ টাকার শোকে তারা এখন পাগল প্রায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। মানব পাচারকারীদের হাতে পড়ে এই দুজন ব্যক্তির জীবন একেবারে শেষ। রাশেদুল এবং রাশেদা খুবই বাজে প্রকৃতির মানুষ। তাদের দ্বারা সবই সম্ভব। তারা স্বামী-স্ত্রী এই এলাকার দুই একজনের সহযোগিতায় মানব পাচারসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত। আর তাদের অন্যতম সহযোগী গফুর। আমরা চাই অসহায় দুই যুবক তাদের টাকা যেন ফেরত পায় এবং দোষীদের শাস্তি হোক।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তানভীর ও আনিস বলেন, আমরা রাশেদা ও রাশেদুল এর প্রলোভনে পড়ে বড় আশা করে বিদেশ পাড়ি জমিয়ে ছিলাম। কিন্তু তারা এভাবে আমাদের ধোঁকা দিবে জানতাম না। আমাদের উপর কি পরিমাণ অত্যাচার নির্যাতন করেছে তা আমরাই জানি। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার চাই এবং আমাদের টাকা ফেরত চাই।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত রাশেদা আক্তার এ বিষয়ে বলেন, আমরা কাউকে বিদেশ নেই নাই। আমরা ওদের একজন দালালের নাম্বার দিয়েছি।
এ বিষয়ে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোশারফ খান বলেন, আমরা বিষয়টি মীমাংসা করার লক্ষ্যে রাশেদার দেওয়া প্রথমে ৮০ হাজার এবং পরে বিশ হাজার এই মোট ১ লাখ টাকা তানভীর এবং তার বাবাকে স্বাক্ষর রেখেই দিয়েছি।
বহুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, রাশেদা এবং রাশেদুল বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত। আমরা চাই তাদের শাস্তি হোক এবং ক্ষতিগ্রস্ত যে দুই যুবককে তাদের টাকা দেওয়া হোক।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে ৮ নং বহরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার নুরে আলম মুক্তা বলেন, বিষয়টি ওই ওয়ার্ড মেম্বারের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দিয়ে মীমাংসা করার কথা। ইতিমধ্যে কিছু টাকাও তারা ফেরত পেয়েছে।
সখীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গির আলম বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি এবং আমরা প্রাথমিক তদন্ত করছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর