জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করে গণরুম বিলুপ্তি, মাদক নির্মূল ও ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন আয়োজনসহ বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিশ্রুতি ও সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উপাচার্যের নেয়া এসব প্রতিশ্রুতি ও সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় এগুলোকে ‘কাগজে-কলমে’ বলে অভিহিত করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকে।
জানা যায়, পর পর তিনটি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করে গণরুম বিলুপ্তির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হন উপাচার্য। একপর্যায়ে সিন্ডিকেট সভা ডেকে অছাত্ররা হল থেকে বের না হলে সনদ বাতিল এবং রাষ্ট্রীয় আইনে মামলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেটাও বাস্তবায়ন করতে পারেননি তিনি।
এর আগে, গত বছরের ২৬ মে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির (জেইউডিএস) অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম জাতীয় নির্বাচনের পর জাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০তম বার্ষিক সিনেটেও সিনেটরদের দাবির প্রেক্ষিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গত ২৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। তবুও জাকসু নির্বাচন আয়োজনের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত নারী ধর্ষণের ঘটনায় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে মাদকের অবাধ ব্যবহার, মাদক ব্যবসা সহ আরও অনেক বিষয় উঠে আসে। সেসময় ইউজিসির নির্দেশনা অনুসারে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন উপাচার্য। প্রতিশ্রুতির দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন জায়গায় দিনে-রাতে অবাধে মাদক সেবন চলছে। তবে এসব নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। ফলে উপাচার্যের দেওয়া বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও শিক্ষার্থীরা এখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তিনবার সিন্ডিকেটে অছাত্রদের বের করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। উপাচার্য তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় অনেক ক্ষেত্রেই নজিরবিহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। কাগজে-কলমেই সিদ্ধান্ত নেন। বাস্তবায়ন পদক্ষেপ নাই। সিন্ডিকেটে নেই কোনো নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি।’
এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হয়েও উপাচার্য তার গৃহীত সিদ্ধান্তে দ্বিচারিতা করেছেন। হলগুলো সঠিক সময়ে চালু করতে না পারায় বিরাট এক সেশন জটের মুখোমুখি হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচনের পর জাকসু হবে। তার বাস্তবায়ন তো দূরে থাক, ন্যূনতম কোনো পদক্ষেপ আমরা নিতে দেখিনি। কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনায় বহিরাগত বের করবেন মর্মে তিনবার সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা তার কথার তোয়াক্কা না করে বীরদর্পে হলে থেকেই যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে সিনেট সদস্য অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিলেও, নেয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। অছাত্রদের বের করার জন্য তিনবার সিদ্ধান্ত নিয়েও বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চেয়েও নেয়নি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। জাকসু নিয়েও ছিল তাদের নানা প্রতিশ্রুতি। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে কোনো ভাবেই কাম্য নয়।’
এসব বিষয়ে জানতে উপাচার্যের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর