
কয়েকদিনের টানা প্রবল বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে আরও সহস্রাধিক পরিবার। সেই সাথে কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও পাহাড় ধসে ধ্বংস হয়েছে মানুষের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি।
এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা। নৌকা, ঠেলাগাড়ি ও ভ্যান গাড়ি দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। পরীক্ষা স্থগিতেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে খাগড়াছড়ির আলুটিলায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ৪ ঘন্টার জন্য খাগড়াছড়ির সাথে সারাদেশের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৩ ঘন্টার চেষ্টায় তা স্বাভাবিক হয়েছে। দীঘিনালা উপজেলায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বাঘাইছড়ি উপজেলা, পর্যটন কেন্দ্র সাজেক এবং লংগদু উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় খাগড়াছড়ির সাথে।
মঙ্গলবার সরজমিনে দেখা যায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মেহেদী বাগ, মুসলিম পাড়া, গঞ্জপাড়া সহ আরও ৭টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কুমিল্লা টিলা এবং শালবন এলাকায় ঘটেছে পাহাড় ধসের ঘটনা। এতে ৩ শতাধিক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও ঘরে পানিবন্দি হয়ে আছেন আরও প্রায় ২ হাজার পরিবার।
এদিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং, বেলছড়ি, হাজাছড়া, কবাখালী, পূর্ব হাচিনসনপুর, মুসলিম পাড়াসহ ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যার পানিতে ঘরবন্দি হয়ে আছে ৫ হাজার পরিবার। আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার। এছাড়াও জেলার মহালছড়ি উপজেলা এবং পানছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ঘরবন্দি হয়ে আছেন আড়াই হাজারেরও বেশি পরিবার। আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি নিরাপদ জায়গায় সরে গেছেন আরও কিছু পরিবার।
আষাঢ় মাসের টানা প্রবল বর্ষণে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বসবাসরত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য জেলা প্রশাসন কর্তৃক খোলা হয়েছে জরুরি সেবাকেন্দ্র ও ১০০ টি আশ্রয় কেন্দ্র। পানিবন্দিদের উদ্ধারে কাজ করছে প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ বলেন, 'আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছি। শুকনা খাবারের পাশাপাশি তাদের রান্না করা খিচুড়ি দেওয়া হচ্ছে। দীঘিনালায় ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে গিয়ে পানিবন্দিদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।'
খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরি বলেন, 'বন্যায় পৌর এলাকার অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা সরজমিনে তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের রান্না করা খিচুড়ির পাশাপাশি শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় কাউন্সিলররা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে।'
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, 'আষাঢ় মাসের টানা বৃষ্টির কারণে জেলার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটেছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।'
এর আগে গত রবিবার থেকে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করেছে প্রশাসন। দুর্যোগ মোকাবেলায় বাতিল করা হয়েছে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর