সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য তৃতীয় দিনের মতো দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যার ফলে ঢাবিসহ অধিভুক্ত-উপাদানকল্প ১৯৮ কলেজের শিক্ষার্থী ও সেবাপ্রার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছে।
বুধবার (৩ জুলাই) অন্যান্য দিনের কলা ভবনের মূল ফটকের সামনে অন্যান্য দিনের মত কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, আমরা প্রত্যয় স্কিম ঘোষণার পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছি। আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই স্কিমের বাতিল চাই। আমাদের ৩ দফা দাবি যদি সরকার মেনে নেয় তাহলে আগামীকাল থেকেই ক্লাসে ফিরব। আর দাবি মেনে না নেওয়া হলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূইয়া বলেন, গতকাল অর্থমন্ত্রী বলেছেন আমাদের দাবি নাকি অযৌক্তিক, কিন্তু তিনি নিজে না জেনেই এমন মন্তব্য করেছেন। তার মন্ত্রণালয় যেভাবে তাকে ব্রিফ করেছে সেভাবেই তিনি বলেছেন। এই প্রত্যয় স্কিম বিষয়ে মন্ত্রীর জেনে তারপর মন্তব্য করা উচিত ছিল। আমাদের আন্দোলন কার্যকর পথেই এগোচ্ছি। আমরা আন্দোলন ও আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধানের চেষ্টা চালাব। এই আন্দোলনে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে এবং আমরা বিজয় নিয়েই ক্লাসে ফিরব।
বন্ধ লাইব্রেরি, ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা: এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ও বিজ্ঞান লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির মূল ফটকে ঝুলছে কর্মবিরতির ব্যানার। যেখানে লিখা, ‘পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে ১লা জুলাই ২০২৪ হইতে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি।’ আর কয়েক দিনের মতো ব্যস্ত থাকত ঢাবির প্রশাসনিক ভবনে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাগ্রহীতা শিক্ষার্থীরা।
অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি: এদিকে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাদের ভাষ্য আন্দোলন সফল করে তবেই ঘরে ফিরবেন, অন্যথায় ঢাবিকে অচল করে দিয়ে লাগাতার কর্মবিরতি চলতে থাকবে। এবং চলমান কর্মবিরতির মধ্যেই অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর পদত্যাগের দাবিও উঠেছে।
বুধবার (৩ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মিলিত হয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতির প্রতি সংহতি জানান এবং অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান। তারা অর্থমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
ঢাবির কর্মচারী সমিতির সভাপতি সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘এই আন্দোলন সফলভাবে শেষ না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে এমন রাজনীতি কখনও মেনে নেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীকে কে বা কারা এমন ভুলভাল বুঝিয়েছে, আমরা জানি না। বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য আন্দোলন করে ছাত্রত্ব হারিয়েছিলেন, তাদের প্রতি এই অন্যায় স্কিম মেনে নেওয়ার মতো নয়। এই প্রত্যয় স্কিম যদি বাতিল না করা হলে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাবিকে অচল করে দেবো, পুরো বাংলাদেশ অচল করে দেবো।’
এর আগে গত ৩০ জুন ঢাবিসহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দফা দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
দাবিগুলো হলো, ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।
গত ১৩ মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কতৃর্ক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, যে সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ১ জুলাই তারিখের পর যোগদান করবেন তাদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর