পানি নিষ্কাশনের পথে ইটপাথর দিয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের আমির হোসেন নামের প্রভাবশালী এক যুবকের বিরুদ্ধে।
এজন্য গত দুই বছর ধরে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগড়া গ্রামের ৫০টি পরিবারের প্রায় ৩শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এবং ১শত কিয়ার (৩০ শতাংশে এক কিয়ার) জমি অনাবাদি থাকে এছাড়াও পানি নিষ্কাশনের রাস্তা বন্ধ থাকায় জমে থাকা বাদাঘাট টু ঘাগড়া সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিন স্থানে ভেঙে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এই বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিনের কাছে গ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ভুক্তভোগী প্রায় ৫০টি পরিবারের গণস্বাক্ষরীত একটি আবেদন করেন।
ভুক্তভোগীর জানায়,পানি নিষ্কাশনের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় জমে থাকা পানিতে গ্রামের খড়ের পালা,বাড়ি-ঘরের আঙিনা এবং সীমানা প্রাচীরের নীচ পর্যন্ত ছুঁই ছুঁই করছে বর্ষার পানি। অনেক বাড়িঘরের ভিতরে পানি উঠে যাওয়ায় তাদের ছোট ছোট শিশু ও পারিবার পরিজন নিয়ে পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। ঘরের সামনে হাঁটু পানি থাকায় বর্ষার কালে মাসের পর মাস বাধ্য হয়েই তাদের ঘরের ভিতর খাটের উপর দিনরাত পাড় করতে হচ্ছে। নর্দমার পানির সাথে বর্ষার পানি মিশে নোংড়া হয়ে পড়েছে। কাজের চাপে সেই নোংড়া পানি ভেঙ্গে গ্রামের মানুষ যাতায়াত করলেও নারী এবং শিশুরা চলাচল করতে পারছে না। বাড়ির আঙিনায় পানি ওঠায় অনেকেই রান্নাও করতে পারছেন না।
গ্রামের পানি নিষ্কাশনের রাস্তায় দেয়া বাঁধ দ্রুত অপসারণ না হলে এবং আরও কয়েক দিন টানা বৃষ্টিপাত হলে ওই সড়ক ভেঙে গিয়ে এর আশপাশে থাকা প্রায় ৫০ টি গ্রামের মানুষের এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সেই সাথে জমে থাকা পানির কারণে এখানকার প্রায় ১০০ কেয়ার জমিতে (৩০ শতাংশে এক কিয়ার) কোন ফসল না করতে পারায় গত দুই বছর ধরে অনাবাদি রয়েছে।
ভুক্তভোগী আব্দুল করিম(৭১)বলেন,আমির হোসেন প্রভাবশালী মানুষ। তার টাকাপয়সা অনেক। সড়কের সাথে সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে গ্রামের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেন। প্রতিবাদ করনে আমির হোসেন গতবছর আমাদের নামে মিথ্যা মামলা করে।
ওই গ্রামের আমরা গ্রামের শাফিয়া বেগম(৬০) বলেন, এইখান ড্রেইন আছিন(ছিল) আজীবন এই ড্রেইন দিয়া পানি নামছে। অন্নে(এখন) পাক্কাচাক্কা(পাকা সড়ক) কইরা বান(বাঁধ) দেলাইছে(দিয়েছে)। অন্নে(এখন) মেঘ আইলেই(আসলে)পানি লাইজ্ঞা(লেগে)থাকে। একই কথা এই গ্রামের ভুক্তভোগী কালা মিয়া(৬৫), জালাল উদ্দিন (৭১), আব্দুল আহাদ(৫৫)।
ঘাগড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নুর হোসেন মল্লিক(৬০) বলেন, যেখান বাঁধ দিয়েছে এদিক দিয়ে একটা খাল ছিল। কিন্তু গত দুই বছর পূর্বে উত্তর হাটির(পাড়ার)আমির হোসেন এই জায়গা কিনে এই খাল মাটি ভরাট করে গ্রামের পানি নিষ্কাশনের খাল বন্ধ করে দেয়। শুধু বন্ধই করেনি। সে ইটপাথর দিয়ে পানি নার রাস্তায় স্থায়ীভাবে বাঁধ দেয়ার কারণে গত দুই বছর ধরে এখানে বসবাসকারী ৫০পরিবারের প্রায় ৩ শত মানুষ পানির নিচে হাবুডুবু খায়। এই বাঁধের উত্তরে গ্রামের প্রায় ১০০ কেয়ার জমি বর্ষায় পানির নিচে থাকায় অনাবাদি থাকে।
অভিযুক্ত ঘাগড়া গ্রামের আমির হোসেন (৩০) বলেন, আমি এই জাগা কিনছি। কিনে মাটি পালাইয়া বাড়ি বানিয়েছি। এখন এই জাগা দিয়া পানি যাইবার লাগি দিলে আমার মাটি সব কাইটা জায়গা। তিনি আরও বলেন,গ্রামের সব পানি আমার এখান দিয়ে গিয়ে আমার বাড়ির সব মাটি পানির সাথে জায়গা। তাই ইট দিয়া বান দিছি।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, গ্রামবাসী পানি নিষ্কাশনের জন্য আমার কাছে একটি আবেদন নিয়ে আসছিল। আমি এর আগেও বাঁধ ভেঙে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিয়ে আসছিলাম। এখন যদি আবার ওই স্থানে বাঁধ দিয়ে থাকে তাহলে আমি সরেজমিনে দেখে অতিদ্রুতই ওই গ্রামের জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য বাঁধ অপসারণ করে দিয়ে আসবো।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর