• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ০৫ জুলাই, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ৮ মিনিট পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ০৩ জুলাই, ২০২৪, ১১:৪৭ রাত
bd24live style=

মডেল মসজিদ নির্মাণে ঘুষ, প্রকৌশলী স্বামীর দুর্নীতির তদন্ত চাইলেন স্ত্রী

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

ইসলামী জ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রসারের লক্ষ্যে সরকার ২০১৭ সালে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মোট ৬৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নেয়। মেয়াদ বাড়ানোর পরও প্রকল্পটি শেষ না হওয়ায়। প্রকল্পটি আরও দুই বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল। শুরুতে ৮৪২ কোটি টাকা নেওয়া প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পালন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তবে প্রকল্পটি নিয়ে বারবার অনিয়মের অভিযোগে ধর্মীয় এ প্রতিষ্ঠান নির্মাণ প্রকল্পকে বিতর্কিত করে তোলে অনিয়মকারীরা। এবার মডেল মসজিদ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত নীলফামারী গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ নেওয়ায় প্রমাণসহ স্বামীর বিরুদ্ধে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই কর্মকর্তার স্ত্রী রেজওয়ান আহমেদ খুশবু।

জানা যায়, দিনাজপুর গণপূর্ত বিভাগ থেকে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান নীলফামারীতে যোগদান করেন। যোগদানের পরেই তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী অন্যান্য দাপ্তরিক দায়িত্বের সঙ্গে নীলফামারী সদর উপজেলা ও জলঢাকা উপজেলায় নির্মিতব্য ‘মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্ব দেন।

২০২৩ সালের মার্চের মধ্যেই নীলফামারী সদর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শেষ হয়। সদর উপজেলা মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজের চুক্তিমূল্য ১৩ কোটি ৫ লাখ টাকা হলেও তা ১৬ কোটি ৯২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। আর বর্তমানে জলঢাকা উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এ দুই মসজিদ নির্মাণকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪৫ লাখ ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

তার স্ত্রী রেজওয়ানা হাসনাত খুশবু অভিযোগ করে বলেন, ‘২০২১ সালের জুলাই অথবা আগস্ট মাসে মোবাইল ফোনে আমার স্বামী মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ হতে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতার করতে শুনি। ফোনালাপ শেষ হলে আমি তাকে বলি, মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখান থেকে তুমি ঘুষ নেবে?’ এতে সে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয় এবং আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এ সময় গর্ভে সন্তান থাকায় প্রচণ্ড রকম অপমানিত বোধ করলেও কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু এরপর থেকেই সামান্য ব্যাপারেও কথাকাটাকাটি হতে শুরু হয়। এভাবে ধীরে ধীরে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন।

তিনি বলেন, স্বামী আমাকে বলে আমি এরকম থাকতে চাই না, বড়লোক হতে হবে। যদি মডেল মসজিদ থেকে ঘুষ নিতে না দিস তাহলে বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আয়। সংসরারের সুখ-শান্তির কথা বিবেচনা করে নানা অজুহাতে তাকে ৭ লাখ টাকা এনে দেই। এ ছাড়া বিয়ের সময় আমার বাবার কাছ থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা যৌতুক নেওয়া হয়। বিয়ের পর বাড়ি সংস্কারের কথা বলে আরও আট লাখ টাকা নেয়।

খুশবু আরও বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজে স্বামীর ঘুষ নেয়ার তথ্য পেয়ে বারবার অনুরোধ করেও তাকে দুর্নীতি থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়েছি। এমনকি দুর্নীতিতে বাধা দেওয়ায় আমাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। বলে, তুই ও তোর পরিবার আমার কিছুই করতে পারবি না। আমার ক্ষমতা ও টাকার কাছে তোরা ভেসে যাবি। এভাবে বলতে বলতে অনেক মারধর করে। তার ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি মেনে নিলে চুপচাপ থাকলে সব স্বাভাবিক থাকত। নির্যাতন করত না। যখন সে সৎ ছিল তখন কোনো সমস্যা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সন্তান জন্ম নেওয়ার পরে একদিন দেখলাম, মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র। তাকে জিজ্ঞেস করি এটা কী? তখন তার উত্তর ছিল, নানা কাজে টাকা পয়সা লেনদেন করতে হয়। তাই এই প্রতিষ্ঠান করছি। ধান, ভুট্টা, তামাকের ট্রেডিং হোক কিংবা না হোক, একটি প্রতিষ্ঠান থাকলে সুবিধা।

প্রকৌশলীর স্ত্রী বলেন, মে মাসে ভুট্টা ক্রয় ছাড়া এ পর্যন্ত মের্সাস রাফি ট্রেডার্সে কোনো লেনদেন হয়নি। এ অ্যাকাউন্টে যে লেনদেন হয়েছে সেটিও অন্য উৎস থেকে। আর এফডিআর কখন, কোথায় এবং কোন উৎসের অর্থ দিয়ে করা হয়েছিল সেটিও সংসার জীবনে দেখিনি। নীলফামারীর চৌরঙ্গী থেকে সৈয়দপুরে রাস্তার কাজ থেকেও ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছে। বিয়ের সময় অতি সাধারণ পরিবারের একজন সন্তান হলেও, বর্তমানে আমার স্বামীর রয়েছে বিলাসবহুল বাড়িসহ বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি। ঘুষ-দুর্নীতি ছাড়া এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। দুর্নীতির তদন্ত এবং আমার ওপর নির্যাতনের প্রতিকার চাই।

প্রকৌশলীর স্ত্রী আরও বলেন, নীলফামারী সদর উপজেলার রূপালী ব্যাংকে আমার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলে এবং ব্যাংকের চেক বই ইস্যু হওয়ার পর আমার স্বামী জোরপূর্বক ব্লাংক চেকে আমার স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। আমি সচিবের কাছে অভিযোগ করেছি। তিনি সুষ্ঠু তদন্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন। যদি সে অপরাধী হয় তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

জানা যায়, আশরাফুজ্জামান গণপূর্তে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের আগে তার বাবা আব্দুল মান্নানের একটি ওষুধের দোকানে পল্লী চিকিৎসকের কাজ করতেন। তাদের বাড়ি বলতে ছিল একটি ঘর। কিন্তু পাঁচ বছরে বদল হয়েছে বাড়ির চেহারা। দুই কক্ষের ঘর থেকে হয়েছে পাঁচ কক্ষের আলিশান বাড়ি। বাড়ির চতুর্দিকে সীমানা প্রাচীর। নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন গেট।

আর বাড়ির একপাশে মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্সের নামে একটি গুদাম ঘর। ২০২২ সালে মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্সের ট্রেডলাইসেন্স নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের মে মাসে প্রায় ১১০০ মণ ভুট্টা ক্রয় করে সেই গুদামঘরে গুদামজাত করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠান থেকে দৃশ্যত কোনো ভুট্টা বিক্রি হয়নি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের গত ৫ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট হতে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ডিপোজিট এবং ৩৩ লাখ ৪৬ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২০২৪ সালের ৯ ও ১০ জানুয়ারি ৯ লাখ টাকা ও ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা নগদ জমা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে এফডিআর ক্লোজড বাবদ ১৯ লাখ ৯৭ টাকা জমা হয়েছে।

ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মডেল মসজিদ প্রকল্পের পরিচালক নজিবুর রহমান। তিনি বলেন, তদন্ত করে চাকরিবিধি অনুযায়ী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আমাদের কাছে অভিযোগ আসেনি। তবে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব।

নীলফামারী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুজ্জামান বলেন, আমি জেনেছি উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানের সঙ্গে তার স্ত্রীর পারিবারিক কলহ ছিল। এ কারণে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর মেয়েপক্ষ তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। ওই মামলায় তিনি জামিনে আছেন।

জানতে চাইলে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করে অভিযুক্ত উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, অভিযোগকারী আমার সাবেক স্ত্রী। গত ৩ মার্চ তাকে ডিভোর্স দিয়েছি। আমি তাকে বিয়ে করেছি ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। মে মাসের ৭ তারিখে আমার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করে। পরে আমি জামিন পাই। এরপর থেকে আমার বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্র করছে। হয়রানিমূলক এবং আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব বিষয় গোপন রেখে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com