গত পাঁচ দিনের টানা ভারী ও মাঝারী বর্ষণ এবং উজান থেকে বয়ে আসা ঢলে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে আকস্মিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
এ দুটি নদে বিপদসীমার ৭৭ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহীত হচ্ছে বন্যার পানি। দেখা দিয়েছে দেওয়ানগঞ্জ - সানন্দবাড়ী ও দেওয়ানগঞ্জ - খেলাবাড়ী সড়কে ভাঙন। এতে এ উপজেলার চার ইউনিয়ন ছাড়াও কুড়িগ্রামের রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলার অন্তত দুই লক্ষ মানুষের সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে দেখা দিয়েছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র নদী ভাঙন।
বন্যায় বুধবার উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়কে মন্ডলবাজারের উত্তর পাশে দুটি ¯’ান ভেঙে গেছে। এতে খোলাবাড়ি, মইন্নিয়ারচর, হরিচন্ডি, চরবাহাদুরাবাদ, ফারাজীপাড়া, চরডাকাতিয়া, নয়াগ্রামের সাথে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একই দিন দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দবাড়ি সড়কের কাঠারবিল মহারাণী নদীর উপর নির্মাণাধীন ব্রিজের বিকল্প সড়কে ভাঙন ধরে। ওই দিন বিকেল নাগাদ ওই বিকল্প সড়ক ভেঙে যায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উপজেলা সদরের সাথে উত্তরা লের চারটি ইউনিয়ন হাতিভাঙ্গা, পাররামরামপুর, চরআমখাওয়া ও ডাংধরাসহ কুড়িগ্রামের রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা। একই সড়কের বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের সর্দারপাড়ায় বিরাট অংশে ভাঙন ধরে। বর্তমানে সড়কটির বাকি অংশে ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারে না। শুধুমাত্র একটি ইজিবাইক পথচারী যাতায়াত করতে পারে। উপজেলা প্রশাসন, এলজিইডি ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সড়কের ওই স্থান সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে।
কাঠারবিল সাপমারী গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, মহারাণী নদীর ওপর ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছিল। ওই স্থানের নতুন ব্রিজের নির্মাণ কাজ চলছে। ব্রিজটির পূর্ব পাশ দিয়ে বিকল্প সড়ক করা হয়েছিল। প্রবল বর্ষণে ওই বিকল্প সড়ক ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যাবস্থা। পারাপারের জন্য তার অদূরে নৌকা চালু করা হয়েছে। পথচারী দুর্ভোগ নিয়ে নৌকায় পারাপার হচ্ছে। কিন্তু কোনো যানবাহন চলাচল করতে পাচ্ছে না।
ফারাজীপাড়ার আনিছুর রহমান বলেন, প্রতিবছর মন্ডল বাজারের কাছে সড়ক ভেঙে যায়। পরবর্তীতে ওই সড়ক সংস্কার ও পূণনির্মাণ করা হয়। কিন্তু টিকে না। এ কারণে এবার প্রবল বর্ষণে ওই সড়কের দুটি স্থানে শুরুর দিকেই ভেঙে যায়। এতে কয়েক হাজার মানুষের সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই স্থানে পারাপারের জন্য নৌকা চালু করা হয়েছে। এলাকাবাসী পথচারী দুর্ভোগ নিয়ে পারাপার হচ্ছে।
সড়ক দুটি ভেঙে তীব্র স্রোতে ভাটির দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে উপজেলা গুজিমারী গুচ্চগ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই গ্রামের ৭০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় ও রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পানিতে তলিয়ে গেছে রেলওয়ে স্টেশন থেকে উপজেলা পরিষদমুখী সড়ক। এতেও ভোগান্তিতে পড়েছে পথচারী ও এলাকাবাসী।
ভারী বর্ষণে গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বন্যার পানি বিপদসীমার ৭৭ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে মধ্যমাঞ্জলসহ কিছু নিম্নাঞ্চল। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন সড়কে পানি ওঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁশের সাঁকো। পানি বৃদ্ধি চলমান থাকায় উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাজার হাজার একর জমির ফসল। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে উপজেলার পোল্যাকান্দি নামাপাড়া, পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়া, বড়খাল, মাঝিপাড়া, সানন্দবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়ে তীব্র নদী ভাঙন। অনেক স্থানে ফসলি জমি ভেঙে নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি। গ্রামগুলোর আরো বিস্তির্ণ অ ল ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙনের শঙ্কায় নদীপাড়ের মানুষেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
পোল্যাকান্দি নামাপাড়ার আমির উদ্দিন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদ এ গ্রামে বছরের পর বছর ভাঙছে। প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এবার বন্যার শুরুতেই পোল্যাকান্দি নামাপাড়ায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙছে ফসলি জমি বসতবাড়ী। ভাঙনের শিকার মানুষ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘরবাড়ী টেনে হেঁচড়ে সরিয়ে নিচ্ছে। তিনি ওই এলাকার নদী ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
একই অভিযোগ উপজেলার বড়খাল, মাঝিপাড়া, খানপাড়া, চরডাকাতিয়া, খোলাবাড়ী, পোল্যাকান্দি মধ্যপাড়া, সানন্দবাড়ী অ লের মানুষের। বছরের পর বছর নদী ভাঙছে। প্রতিকার মিলছেনা। শুস্কমৌসুমে ভাঙন রোধের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী পাড়ের মানুষের। ভাঙন রোধে প্রতিকার চেয়ে ধন্যা ধরছেন সংশ্লিষ্ট মহলে। কিন্ত‘ প্রতিকার না পাওয়ায় হতাশায় ভূগছেন তারা।
উপজেলা প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ জানান, দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দবাড়ি সড়কের সর্দারপাড়ায় ভাঙনকবলীত সড়কসহ অন্যান্য ছোটখাট সড়কের সংস্কার বা মেরামত চলছে। ভারী বর্ষণ না হলে বৃহস্পতিবার সংস্কার সম্পূর্ণ হবে। চলাচল করতে পারে সকল প্রকার যানবাহন। দেওয়ানগঞ্জ- সানন্দবাড়ি সড়ক ও দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়ক দুটি পানি কমলে সংস্কার করা হবে। মাটি ফেলে চলাচলের জন্য উপযোগী করা হবে। আপাতত পানি না কমলে ওই দুইটি সড়কের ভাঙনকবলীত স্থানে কিছু করা যাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স জানান, ভেঙে যাওয়া সড়ক সংস্কার ব্যাবস্থা চলমান রয়েছে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা ও স্থানে পরিদর্শন করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
মুনতাসির/সাএ