জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে প্রধান ডাকঘরের কার্যক্রম। প্রতিদিনই খুলে পড়ে ছাদের পলেস্তারা। এতে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করেন। কিন্তু উপায় নেই এই ভবনে সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের। ভবন ভেঙ্গে পড়ার ভয় ও আতঙ্ক নিয়েই সেবা দিচ্ছেন তারা। এতে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও জরুরি নথিপত্র নষ্ট হচ্ছে
দীর্ঘদিন সংস্কার বা মেরামতও করা হয়নি ভবনটি। ইলেক্ট্রিক সঞ্চালনই লাইন গুলোও সেই পুরাতন মান্ধাতা আমলের। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় যে কোনো সময় অগ্নিকাণ্ডসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটনার আশঙ্কার করছেন কর্তব্যরতরা।
উপজেলা প্রধান ডাকঘরে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ভবনটির ছাদের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে আছে। সেই রডগুলোতে জং ধরেছে। পোস্ট অফিসের কর্মচারীরা আতঙ্কের মধ্যেই দাপ্তরিক কাজ করছেন। সেবা নিতে আসা ব্যক্তিরা বার বার ছাদের দিকে তাকাচ্ছেন। কখনো মাথার উপর আবার কখনো আসবাবপত্রের উপর ছাদের পস্তোরা খুলে পড়ছে। চলমান বর্ষায় ভেতরে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ বিরাজমান। ভবনটি প্রধান সড়কের পাশে। নীচু জায়গা হওয়ায় ভারি বর্ষণে ডাকঘরটির সামনে পানি জমে। আবার ডাকঘরটির সীমানাপ্রাচীর ও মূল গেট ভেঙে গেছে অনেক আগেই। এতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভবনটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
অতিদ্রুত সরকারি জনগুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের জন্য জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনটি ভেঙে নতুন আধুনিক ভবন নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, উপজেলা ডাকঘরটির ভবন ও পোস্টমাস্টারের বাসভবন ১৯৮৫ সালে পৌর শহরের প্রধান সড়কের সরদারপাড়া মহল্লায় নির্মাণ করা হয়। এই পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্র, সাধারণ হিসাব, মেয়াদি হিসাব, ইলেকট্রনিক মানি অর্ডার (এসবিএফডিইএমও), ক্যাশ কার্ড ও বিমার কার্যক্রমসহ চিঠিপত্র আদান-প্রদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিদিন গড়ে সেখানে দেড় শতাধিক সেবা প্রত্যাশী আসা যাওয়া করেন। এই সেবা দিতে সেখানে কর্মচারী রয়েছেন আটজন। এর মধ্যে পোস্টমাস্টার একজন, পোস্টাল অপারেটর দুজন, পোস্টম্যান একজন, একজন প্যাকার, একজন রানার ও একজন ইডি চৌকিদার রয়েছেন।
উপজেলা পোস্টমাস্টার জানান, ডাকঘরটিতে বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি চিঠিপত্র, চাকরির প্রবেশপত্র ও বিভিন্ন পার্সেল আসে। কিছু গ্রাহক বীমার টাকা লেনদেন করেন। আবার অনেকেই সঞ্চয়পত্র কিনে টাকা লেনদেন করেন। ভবনের ছাদের পলেস্তারা খুলে কখনো মাথায় আবার কখনো আসবাবপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্রে পড়ে। এতে গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট হয়। এখন চলমান বর্ষায় পুরো ভবনটি স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় ডাক বিভাগের লোকজন এসে ভবনটি পরিদর্শন করে গেলেও সংস্কার হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই দাপ্তরিক কাজকর্ম করতে হচ্ছে।
ডাকঘরে সেবা নিতে আসা সজল হোসেন বলেন, বিভিন্ন কাজে প্রতি মাসেই ডাকঘরে আসি। ভবনের প্লাস্টার গুলো খসে পড়ছে। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার ভয় আতঙ্ক নিয়ে কাজ সারতে হয়। অতি দ্রুত এই ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা দরকার।
পোস্টাল অপারেটর গোলাম রব্বানী জানান, বর্তমানে ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। ছাদের বেশিরভাগ জায়গার পলেস্তারা খুলে রড বের হয়েছে। কাউন্টারের কোনো স্থান ঠিক নেই। সব ভেঙে গেছে। নতুন ভবন না হলেও অতিশীঘ্রই মেরামত প্রয়োজন।
ডাকঘরের রানার দুলাল হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ বলেন, বার বার মনে হয় এই বুঝি মাথার উপর ভেঙে পড়ল ছাদ? বর্তমানে এই জরাজীর্ণ ভবনে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মান্ধাতা আমলের ইলেক্ট্রিক ওয়্যারিং গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। যে কোনো সময় শর্টসার্কিট হয়ে অগ্নি ফান্ডও ঘটতে পারে। অতি দ্রুত কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।
পোস্ট মাস্টার সিদ্দিক হোসেনের ভাষ্য, ভবন ভেঙে পড়ার ভয় ও আতঙ্ক থাকলেও কিছু করার নেই। মানুষকে সেবা দিতেই হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একাধিকবার এই ভবন পরিদর্শন করলেও এখনো কার্যকরী কোন ব্যবস্থা হয়নি। অনেকবার বিষয়টি লিখিতভাবেও জানানো হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় পোস্ট মাস্টার জেনারেল কাজী আসাদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি ডাক অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। অধিদপ্তরের একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। বেশ কিছু জায়গায় ইতি মধ্যে ওই প্রজেক্টের মাধ্যমে নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। আক্কেলপুরেও খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করা হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর