ঢাকা থেকে ৪২জন যাত্রী নিয়ে ঠাকুরগাঁও রানীশংকৈল উপজেলায় যাচ্ছিল নাবিল পরিবহণ নামের একটি কোচ। পথে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের আম বোঝায় একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ ছয়জন নিহত হন। এছাড়াও এই ঘটনায় ২৮জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভর্তি হয়।
নিহতরা হলেন, ট্রাকের চালক ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মিত্রপট্টি গ্রামের মৃত সুরা মিয়ার ছেলে হাসু মিয়া (২৮), নাবিল কোচের সুপারভাইজার দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ মিলরোড এলাকার মৃত লণ বাহাদুরের ছেলে রাজেশ বাহাদুর (৩০), কোচের যাত্রী পীরগঞ্জ উপজেলার দানেশ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী (৫২), বোচাগঞ্জ উপজেলার জাহিদের কন্যা বিভা (১০) ও চিরিরবন্দর উপজেলার খোচনা গ্রামের মমিনুলের ৫ মাসের কন্যা শিশু সায়মা মেহনাজ এবং ভ্যান চালক সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের স্বদেশ রায় (২৩)।
শুক্রবার ভোর ৬টায় দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের সড়কের সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়নের চকরামপুর ও জালিয়াপাড়ায় এবং বিকেল ফুলবাড়িতে পৃথক তিনটি দুর্ঘটনা ঘটে।
এঘটনা অদূরে ট্রাকের ধাক্কায় এক ভ্যানচালক ও দুপুরে ফুলবাড়িতে দুজনসহ জেলায় একদিনেই আটজন নিহত হন।
ফুলবাড়িতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রাত হলেন, জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জি ইউনিয়নের পারুইল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ভটভটি চালক মেনহাজুল ইসলাম (৪০)একই থানার বালিঘাটা ইউনিয়নের নওনা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আমান হোসেন (৩০)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার ভোরের দিকে ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে নাবিল পরিবহণ নামের একটি কোচ(ঢাকা মেট্রো ট-১৪-৪১৯০) ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকলে যাচ্ছিল। একই সময় বিপরীত দিক সদর উপজেলা থেকে আম বোঝায় একটি ট্রাক ( ঢাকা মেট্রো ট- ১৭-০০৮৩) গোবিন্দগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। দুটি গাড়ি পাঁচ বাড়ি বাজারের শশরা এলাকায় মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজন মারা যায়। এছাড়াও প্রায় ২৮ থেকে ৩০ জন যাত্রী আহত হয়ে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এর আগে একই এলাকার চকরামপুর থেকে এক কিলোমিটার দূরে জালিয়াপাড়ায় ট্রাকটি অন্যএকটি ধান বোঝাই করা ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ভ্যান চালক স্বদেশ রায় গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ১১টায় তিনি মারা যান।
এদিকে বেলা আড়াইটার দিকে দুপুর ২টার সময় ফুলবাড়ী থেকে একটি খালি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৯৩৮৮) দিনাজপুর অভিমুখে যাওয়ার সময়। অপরদিক থেকে আসা আমবাড়ি হাট থেকে ৯টি গরু নিয়ে একটি ভটভটি (নছিমন) ফুলবাড়ী হয়ে পাঁবিবি যাওয়ার পথে ফুলবাড়ী পৌর শহরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন উত্তর সুজাপুর এলাকায় এলে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের বাঁক ঘুরতে গিয়ে দুটি গাড়ি মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় গাড়ির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনা আহত নাবিল কোচের যাত্রী খানসামা উপজেলার জান্নাতুন আরা জানান, ছোট ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াত খেতে রাতে ঢাকা থেকে নাবিল পরিবহনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই। দিনাজপুরের নামার কথা ছিল। কিন্তু পৌঁছার আগেই হঠাৎ করে একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁধে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চোখের সামনে সব এলোমেলো হয়ে যায়। মাথায় ও বুকে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি।
দুর্ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানে আলমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে দিনাজপুর জেলা প্রশাসন।
পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, দুর্ঘটনাটি ঘটার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ আমরা জানতে পেরেছি। এর মধ্যে অন্যতম চালকের আসনে হেলপারকে বসানো হয়েছিল এবং হেলপারের আসনে চালক বসে ছিল। গাড়ীটি বেপরোয়া গতিতে চলছি বলে আমরা জানতে পেরেছি। হেলপার কাউসারকে রংপুরে রেফার্ড করা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জানান, তদন্ত কমিটি আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে। পাশাপাশি নিহত দাফনকার্য ও আহতদের চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর