ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১৮২ কোটি ৭৭ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। এতে গবেষণা-উদ্ভাবন ও শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট খাতগুলোকে বরাবরের মতোই উপেক্ষা করা হয়েছে।
এবারের বাজেটে গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ধরা হয়েছে মাত্র ৩৫ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ০.১৯ শতাংশ। এছাড়াও ছাত্রকল্যাণ তহবিল বাবদ কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের চাহিদা কোনোভাবেই পূরণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষকÑশিক্ষার্থীরা। ফলে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, প্রশাসন চাইলেই এসব খাতে বরাদ্দ বাড়াতে পারে না।
বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে বরাদ্দকৃত বাজেটের তুলনায় এবারের বাজেটে বৃদ্ধি পেয়েছে ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অনুমোদিত এই বাজেটের মধ্যে ১৭৩ কোটি ৫ লাখ টাকা দেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাত থেকে আসবে ৯ কোটি ৭২ লাখ। বাজেটে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও বিশেষ সুবিধা বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১২১ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যা মোট বাজেটের ৬৬ দশমিক ২২ শতাংশ। আর পেনশন বাবদ ২১ কোটি ৩২ লাখ ২৯ হাজার টাকা। যা মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া অবসর ভাতাভোগীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাবদ ২৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ। সবমিলিয়ে বাজেটের ৭৮.০৪ শতাংশ ব্যয় হবে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, পেনশন ও বিশেষ সুবিধা প্রদানে।
এছাড়া বাজেটে পণ্য ও সেবা (সাধারণ ও মেরামত) ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। যন্ত্রপাতি অনুদান খাতে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ। যানবাহন বাবদ ৫২ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অনুদান বাবদ ৩৭ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। অন্যান্য মূলধন অনুদান বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৫০ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ।
এদিকে গবেষণা-উদ্ভাবন খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ আগের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও তা অপ্রতুল বলে মনে করেন বাজেট বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেখানে বিশ^বিদ্যালয়ের বাজেটে গবেষণা-উদ্ভাবন খাতকে সবচেয়ে মূল্যায়ন করার কথা, সেখানে গবেষণার জন্য বাজেটের কিঞ্চিৎ অংশ রাখা হয়েছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো গবেষণা গবেষণাকর্ম চালিয়ে নিতে পারছেন না। শির্ক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট খাতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের চাহিদা কোনোভাবেই পূরণ সম্ভব নয়। এতে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ বিশ^বিদ্যালয় প্রতিনিয়ত পিছিয়ে যাচ্ছে।
অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, চাহিদা দেওয়ার সময় আমরা মূল বাজেটের প্রায় ১০ থেকে ২৫ শতাংশ গবেষণা ও শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে দিয়ে থাকি। কিন্তু ইউজিসি না দিলে তো আমাদের কিছু করার নেই। ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে বলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি থেকেই আসে। সেটাতো আর চাইলেই প্রশাসন বাড়াতে পারে না।
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মুঈদ বলেন, বাজেট প্রণয়ণ একটি গতানুগতিক কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে চলবে তার খরচের একটা আর্থিক হিসাবমাত্র। আর সেটা অনুমোদন করে ইউজি সি। একটি রাষ্ট্রের বাজেটের মধ্যে যেমন বিভিন্ন উদ্ভাবনী দিক থাকে এটা সেরকম না। এখানে প্রশাসনের ক্রিয়েটিভ কিছু করার নেই। চাইলেই তারা একটা কিছু করতে পারবে না। গবেষণা খাতে চাইলেই তো আর সরকার দিয়ে দিবে না। তবে গবেষণা ও শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিৎ। চাহিদা দেওয়ার সময় অবশ্যই আরও বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। দেওয়া না দেওয়া সরকারের বিষয়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর