
যমুনার নদীর পানি সিরাজগঞ্জে পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৯ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। চুলা তলিয়ে যাওয়ায় খাবারের কষ্ট দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে ল্যা্িট্টন তলিয়ে যাওয়া নারীদের নানা সমস্যা হচ্ছে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় সবজিক্ষেত, মরিচ, পাট, আউশ ধান, তিলসহ প্রায় ৪০৮ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে, পানি বাড়ায় সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের অর্ধেকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী, তেকানি, নিশ্চিন্তপুর ও চরগিরিশের নানাস্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ছালাল চরে নির্মিত মুজিব কেল্লা ভাঙনের কবলে পড়েছে। যেকোনো সময় তা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে। ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে ভেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচিল, কৈজুরী, জালালপুর ও কৈজুরী ভাঙ্গনে প্রতিদিন ফসলীজমি বসতভিটা বিলীন হওয়ায় ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভাঙন কবলিতরা মানববন্ধন করেছে। এছাড়াও চৌহালী উপজেলার ভুতের মোড় এলাকাতেও ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।
যমুনার ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে কাওয়াকোলার প্রায় অর্ধেকাংশ বিলীণ হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন ঘরবাড়ী সরিয়ে নিতে হচ্ছে। ইউনিয়নটি প্রায় সম্পূর্ণ পানির নীচে চলে গেছে। রাস্তাঘাট ও বসতভিটা তলিয়ে যাওয়ায় থাকা ও চলাচলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ঘাস ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে।
মানববন্ধনে পাঁচিল গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সরকার থেকে ৬শ কোটি বরাদ্দ দিলেও ঠিকাদার ও পাউবোর গাফিলতির কারণে সময়মতো কাজ না করায় আমাদের বসতবাড়ি, জমিজমা সবকিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পাঁচিল, আড়কান্দি, কৈজুরীতে প্রতিদিন জমিজমা বিলীন হলেও পাউবো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আরো শতশত বিঘা জমি ও বসতবাড়ি বিলিন হয়ে যাবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান জানান, জেলার ৫টি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ১ হাজার ২৭৬টি পরিবারের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্যোগ ৬০ মেট্টিক টন চাল আর ১০ লাখ টাকা মজুদ আছে। তবে এখনো বিতরণ শুরু হয়নি। এছাড়াও ১৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত ৫শতাধিক মানুষ ও ৮শতাধিক গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, বর্তমানে শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্ট ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট দুটি পয়েন্টেই যমুনার পানি ৫৯ সেমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও ৩/৪ দিন বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, পানি বাড়লেও বড় ধরনের বন্যা না হলেও মাঝারি বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, ভাঙন কবলিত এলাকায় বালি ভর্তি ব্যাগ জিওটিউব ও জিওব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর