সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদ ও কোটা প্রথা বাতিলসহ ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিসহ চার দফা দাবি সংস্কার করে এক দফা দাবিতে ফের ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে সকল গ্রেডে কোটা সংস্কার চান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা৷ রোববার (৭ জুলাই) রাত ৮টায় শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচির শেষে নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাহী বিভাগের কাছেও জানতে চেয়েছি কেন ২০১৮ এর পরিপত্র বাতিল করা হলো। সরকারের কাছে এখনো সুযোগ রয়েছে নতুন করে পরিপত্র ঘোষণা করার। ২০১৮ সালে কোটা সমস্যার আংশিক সমাধান হয়েছিল। আমরা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে কোটার যৌক্তিক সংস্কার পাইনি। এবার যখন মাঠে নেমেছি আমরা সকল গ্রেডে কোটার সংস্কার নিয়েই ঘরে ফিরবো। আমরা কোন আপসে যাবোনা। আমরা কোন আলাপে যাবোনা। কোটা সংস্কার যৌক্তিক এবং আমাদেরও আন্দোলন যে যৌক্তিক এটা নতুন করে বলার কিছু নয়।
আগামী দিনে কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, আমরা ব্লকেডে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। আগামীদিনে এই ব্লকেড কর্মসূচি আরো ছড়িয়ে যাবে। আমরা সংবিধানের পক্ষে লড়াই করছি। কেননা সংবিধানে সুযোগের সমতার কতটা বলা হয়েছে। আমরা কতকাল অপেক্ষা করবো? শিক্ষার্থীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। হয় দাবি আদায় করে পড়ার টেবিলে ফিরবো। নয়তো আমাদের। কোটাধারীদের প্রশাসন আমরা চাই না। কর্মসূচি ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত এবং ব্লকেড চলবে।।
আন্দোলনের আরেক সমন্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এতদিন ধরে আমাদের চার দফা দাবি ছিল। কিন্তু সোমবার থেকে সারাদেশে এক দফা দাবিতে কার্যক্রম চলবে। আমাদের দাবিটি হচ্ছে, সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্য মূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য ওটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে ওটাকে সংস্কার করতে হবে।
রোববার (৭ জুলাই) বেলা ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এতে প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পরে মিছিলটি শাহবাগ এসে অবরোধ করে। যার ফলে রাজধানীর নীলক্ষেত-নিউমার্কেট-শাহবাগ রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড় এবং ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেছেন। তারা ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল ও কোটা সংস্কারের পক্ষে নানা স্লোগান দিচ্ছেন। এতে প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। যার ফলে রাজধানীর নীলক্ষেত-নিউমার্কেট-শাহবাগ রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক-মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে-কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। পরে রাত ৮টা ৫মিনিটে অবরোধ তুলে নিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যে পাদদেশ অনুষ্ঠিত এক সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা চারটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো-
২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। ১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর