
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামরুল হাসান ও তার স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (৮ জুলাই) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জেবুননেছা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু।
দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসানের ৯ কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকার এবং তার স্ত্রী সায়মা বেগমের ১ কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস মেলেনি। গত ১৩ মে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়ে দুদক কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। তার প্রেক্ষিতে কমিশন ওই কর্মকর্তার সম্পদ ক্রোকের জন্য আদালতে আবেদন দাখিলের অনুমতি দেয়। গত ৭ জুলাই দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত-১ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. এমরান হোসেন আদালতের কাছে পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসানের সম্পদ ক্রোকের আবেদন করলে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন’।
কামরুল হাসান বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পিওএম) পদে আছেন।
নগর পুলিশের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রসিকিউশন শাখায় দায়িত্ব পালনকালে ঘুষ গ্রহণ ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি।
দুদক সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ১৯৮৯ সালে সাব-ইন্সপেক্টর পদে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন। চাকুরির ধারাবাহিকতায় পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) হিসেবে সিএমপি, চট্টগ্রামে কর্মরত আছেন। অনুসন্ধানকালে অভিযোগ মোহাম্মদ কামরুল হাসানের নামে ১২ কোটি ৭২লাখ ৯২হাজার ৬৯৫ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১কোটি ২৩লাখ ৩৯ হাজার ২১৬ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১৩ কোটি ৯৬লাখ ৩১হাজার ৯১১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া, একই সময়ে তার মোট ৭০ লাখ ২৮হাজার ২৪১ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের তথ্য পাওয়া যায়।
উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪ কোটি ৮০লাখ ৩২ হাজার ৮৭ টাকা। এক্ষেত্রে তার অর্জিত সম্পদের চেয়ে তার বৈধ আয়ের উৎস ৯ কোটি ৮৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ টাকা কম পাওয়া যায়। তার নামে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
একইভাবে তার স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ২৪০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২ কোটি ৫৩হাজার ২৪০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪০লাখ ১৪ হাজার ৪৩৩ টাকা। তার নামে ১ কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
দুদক প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় মোহাম্মদ কামরুল হাসান এবং তার স্ত্রী সায়মা বেগম বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা মোতাবেক অসাধু উপায়ে অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অবরুদ্ধ (Freeze)/ ক্রোক (Attachment) করার জন্য আদালতে আবেদন দাখিল করে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর