প্রতিনিয়ত এ যেন যানজটের নগরীতে পরিণত হচ্ছে বরিশাল। অদক্ষ ও অপেশাদার ড্রাইভারের হাতে নিয়ন্ত্রণহীন হ্যান্ডেল। এসব যানবাহনের বেপরোয়া গতিতে আতঙ্কে নগরবাসী। বলছি ব্যাটারি চালিত অবৈধ ইজিবাইক ও রিকশার কথা।
সিটির বাসিন্দারা ভোগান্তি আর দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন এসব যানবাহন থেকে। এ যেন রাস্তায় আকাশ পথের মত বিমান চালানোর অবস্থা। গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে নেই কোন উপায়। সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএ কর্তৃক কোন লাইসেন্স না থাকলেও যে কেউ ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও রিকশা নিয়ে নেমে পড়ছেন যাত্রী পরিবহণ করতে। সুষ্ঠু তদারকি এবং নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এ অবৈধ যানের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সেই সাথে বাড়ছে দুর্ঘটনা এবং বিদ্যুৎ অপচয়ের পরিমাণ।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল সিটি এলাকায় চলাচল করছে ১৫ থেকে ১৮ হাজারের অধিক ব্যাটারি চালিত রিকশা। থ্রি-হুইলারের সংখ্যাও কম নয়। যদিও এসব অবৈধ ইজিবাইকের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের কাছে।
আসলে এই অবৈধ যান নিয়ন্ত্রণ করবে সিটি করপোরেশন না ট্র্যাফিক বিভাগ এখানেও রয়েছে গড়মিল। একে অপরের উপর দোষ চাপিয়েই নিস্তার। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এই ব্যাটারি চালিত অবৈধ ইজিবাইক ও রিকশা নিয়ন্ত্রণে নগর ট্র্যাফিক বিভাগ প্রতিদিন ৫ থেকে ১০টি সিটি লাইসেন্স বিহীন অবৈধ ইজিবাইক ও রিকশা আটক করে থাকেন। বেশ কিছুদিন আটকে রাখার পর সেগুলোকে আবার ৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়। এ নিয়েও চলছে তুঘলকি কাণ্ড। মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয়ের বাণিজ্যে ফের রাস্তায় নেমে পড়ছে এসব অবৈধ ইজিবাইক ও রিকশা। যেন দেখার কেউ নেই।
তবে বিআরটিএ বলছে, নগরীতে ‘আয়তনের তুলনায় অবৈধ ইজিবাইক এবং ব্যাটারির রিকশার সংখ্যাই অনেক বেশি। এসব অবৈধ ইজিবাইক বা ব্যাটারির রিকশা বন্ধে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ নেয়া খুব জরুরি।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে লঞ্চঘাট, নথুল্লাবাদ থেকে রূপাতলী এবং লঞ্চঘাট, জেলখানার মোড় থেকে নথুল্লাবাদ ও বেলতলা, তালতলি, লঞ্চঘাট থেকে বেলতলা, চৌমাথা থেকে নবগ্রাম, বটতলা এবং শেবাচিম হাসপাতাল রুটে চলাচল করছে অসংখ্য ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক এবং রিকশা।
এর বাইরে নগরীর অভ্যন্তরীণ রুটেও চলাচল করছে এসব অবৈধ যান। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও গড়িয়ারপার থেকে নলছিটি জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পরিবহণ করছে ইজিবাইক এবং থ্রি-হুইলার। ফলে প্রায়ই আসছে দুর্ঘটনার হতাহতের খবর।
তাছাড়া এসব যানের ভাড়াও নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে দাবি যাত্রীদের। যাত্রীদের জিম্মি করে যে যার মতো করে আদায় করছে ভাড়া। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ‘ইজিবাইকের নিয়ন্ত্রণ সিটি করপোরেশনের হাতে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তারা এ বিষয়ে জোড়ালো কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাম রাজনৈতিক সংগঠনের আন্দোলনের চাপে অবৈধ ইজিবাইক এবং ব্যাটারি চালিত রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না ট্র্যাফিক বিভাগ। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ইজিবাইক চালক এবং মালিকরা।
একেরপর এক সড়কে নামছে অনুমোদনহীন ইজিবাইক এবং রিকশা। অপরদিকে, শহরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ইজিবাইক এবং রিকশা থেকে অবৈধ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। কিছু নেতাদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে অবৈধ ইজিবাইক।
বিআরটিএ বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা অবৈধ। অবৈধ এ যানের সংখ্যা এতোটাই বেড়েছে যে শহরের ধারণ ক্ষমতার থেকে বেশি হয়ে গেছে।
এগুলোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি।‘ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তবে আমরা অবৈধ যানের বিকল্প হিসেবে বৈধ যানের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এতে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা কমে যাবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রুনা লায়লা জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা সিটি করপোরেশনের সাথে বসেছিলাম। অবৈধ যানবাহনের বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ নেয়ার কথা। উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ট্র্যাফিক বিভাগের এই কর্মকর্তা প্রশ্নটি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘অবৈধ ইজিবাইক এবং রিকশার বিরুদ্ধে আমাদের আইনগত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেনের বক্তব্য জানতে অফিসিয়াল নম্বরে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে সিটি করপোরেশনের যানবাহন শাখার পরিদর্শক আতিকুর রহমান মানিক বলেন, ‘নগরীতে কী সংখ্যক ইজিবাইক বা ব্যাটারির রিকশা চলছে সেই হিসাব আমাদের কাছে নেই। এটা ট্র্যাফিক বিভাগের কাছে থাকবে।
তবে দুই হাজার ৬১০টি হলুদ ইজিবাইকের ব্লু-বুক এবং টোকেন দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এর বাইরে চলাচলকারী সব ইজিবাইক অবৈধ। তিনি বলেন, ‘অবৈধ এসব ইজিবাইক বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত মাসে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগে সিটি করপোরেশন থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা বলা সম্ভব না। এ
দিকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ‘একটি ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও রিকশায় পাঁচটি করে ১২ ভোল্টের ব্যাটারি থাকে। ১২ ভোল্টের পাঁচ ব্যাটারির ধারণক্ষমতা ২ কিলোওয়াট।
দিনে পাঁচটি ব্যাটারির একটি ইজিবাইক আট ঘণ্টা চার্জ দিলে খরচ হয় ১৪-১৫ ইউনিট বিদ্যুৎ। সে হিসেবে বরিশাল নগরীতে বর্তমানে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে ইজিবাইক চার্জে। তাই এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি এখন সচেতন মহলের।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর