
কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও আলোচিত এমপি বদির শ্যালক হুমায়ুন কবির চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুলাই) জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে দুপক্ষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত আপিল শুনানি শেষে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯ এর ধারা ২৬ এর উপধারা ২ (ঙ) এর বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন।
হুমায়ুন কবির চৌধুরী উখিয়া-টেকনাফ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারের বড় ভাই ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির শ্যালক। তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বড় ভাই। উখিয়া ফজিলেতুন্নেছা মুজিব সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যাপনা করতেন হুমায়ুন কবির চৌধুরী। তার মনোনয়ন আপিল শুনানিতে বাতিল হওয়ায় উখিয়া জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
গত ৭ জুলাই অপর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাদমান জামী চৌধুরী স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ধারা ২৬ এর উপর ধারা ২ এর বিধান যথাযথ প্রতিপালিত হয়নি মর্মে আপিল করেন।
তার আইনজীবী ব্যারিস্টার সাফফাত ফারদিন রামীম জানিয়েছেন, হুমায়ুন কবির চৌধুরী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রাক্কালে তার পদত্যাগের বিষয়টি যথাযথ হয়নি এটি ছিল আমাদের দাবি। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমাদের দেওয়া কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছেন এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে হুমায়ুন কবির চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করেছেন। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯ এর ২৬(২)(ঙ) ধারা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত বা বহাল থাকার পর কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৫৩ ধারা অনুযায়ী পদত্যাগ করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দিষ্ট শর্তে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির পর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিধান রয়েছে। বাছাইয়ের সময় হুমায়ুন কবির চৌধুরী নিয়োগদানকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাঁর পদত্যাগের আবেদন নিষ্পত্তির কোনো প্রজ্ঞাপন দেখাতে পারেননি তার আইনজীবীরা।
এদিকে তফশিল অনুযায়ী গত ৫ জুলাই মনোনয়ন যাচাই-বাছাইকালে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীর মনোনয়নের বৈধতা ঘোষণা দিলে তীব্র আপত্তি তুলেন অপরাপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
প্রার্থী হুমায়ুন কবির চৌধুরীর নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক জানান, সংশ্লিষ্ট কলেজ অধ্যক্ষকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তাই তার প্রার্থীতা বৈধতা পেতে কোন বাধা ছিল না। কিন্তু আপিল শুনানিতে হুমায়ুন কবির চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এখন আমরা মনোনয়ন বৈধ করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ চেয়ে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিব।
চেয়ারম্যান প্রার্থী সাদমান জামী চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, সরকারি গেজেটভুক্ত সরকারি কলেজের অধ্যাপনা করে হুমায়ুন কবির মন্টুর প্রার্থিতা বহাল থাকতে পারেনা। আমাদের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আপিল শুনানির মাধ্যমে হুমায়ুন কবির চৌধুরীর প্রার্থীতা বাতিল করায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে দাবী করে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, আগামী ২৭ জুলাই রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত নির্বাচনে টানা ৪ বারের চেয়ারম্যান শাহ কামাল চৌধুরীর বড় পুত্র সাদমান জামী চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম, উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসাইন মিথুন ও আব্দুল মালেক চৌধুরী প্রার্থী। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১০ জুলাই। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ১১ জুলাই। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ১৫ টি ভোট কেন্দ্রে ১০১ বুথে ২৭ জুলাই সকাল ৮ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রাজাপালং ইউনিয়নে মোট ভোটার ৪২৫৯৮ জন। তৎমধ্যে ২২১৮৭ জন পুরুষ ও ২০৪১১ জন মহিলা ভোটার।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর