এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে ও জুন মাসের আমদানি বিল বাবদ ১৪২ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। চলতি মাসের শুরুতে ছিল ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার।
বুধবার (১০ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এখন গ্রস রিজার্ভ ২৬.১৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর শর্ত অনুযায়ী বিপিএম-৬ মেথডের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবের সঙ্গে ৫.৭ বিলিয়ন ডলারের পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ২০.৪৬ বিলিয়ন।
এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেয়। প্রকাশ করে না। তবে জুনের শেষ দিকে আইএমএফের ঋণ সহায়তা পাওয়ার পর দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই সময় (৩০ জুন) শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৬৭৭ কোটি মার্কিন ডলার। এখন থেকে আকুর বিল পরিশোধের পর এনআইআর থেকে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার কমে যাবে; অর্থাৎ দেশে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ কমে ১৫ বিলিয়নের ঘরে নেমে এসেছে। প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হল বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।
আকু হলো, একটি অন্তর্দেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দপ্তর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। তবে এখন আকুর সদস্য পদ নেই শ্রীলঙ্কার। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন যাবত আমদানি ব্যয় পরিশোধের বিভিন্ন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির আকু সদস্য পদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
জাতিসংঘের এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক কমিশনের (এসক্যাপ) ভৌগলিক সীমারেখায় অবস্থিত সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য আকুর সদস্য পদ উন্মুক্ত।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন বাংলাদেশের জন্য ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন করে আইএমএফ। আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ মোট ঋণ নিচ্ছে ৪.৭০ বিলিয়ন ডলার। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬.২৭ মিলিয়ন ডলার এসেছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন ডলার আসে গত বছরের ডিসেম্বরে। মোট সাত কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করা হবে।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় (রিজার্ভ)। বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে ক্রমাগত চলতি হিসাবের ঘাটতিও বেড়ে গিয়েছিল। ডলারের বিপরীতে টাকার দরের অবনমন হতে থাকলে প্রভাব পড়ে জ্বালানির দর ও আমদানিতে।
দ্রুত ক্ষয় হতে থাকা রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা নিতে আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়ে আবেদন করে ২০২২ সালের জুলাইতে। বিভিন্ন ধাপের আলোচনার পর ওই বছরের নভেম্বরে ঋণ চুক্তির অনুমোদন দেয় সংস্থাটি।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। তিনদিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কঠিন শর্তের বাস্তবায়ন এবং আগামীতে আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয়। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে।
চতুর্থ কিস্তির জন্য বাংলাদেশকে এ বছরের জুন শেষে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ১০ কোটি ডলার রাখতে বলা হয়েছিল। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে তা কমিয়ে ১ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার (১৪.৭ বিলিয়ন) করা হয়।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর