১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রতিবাদে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এবার রাজপথে সরব হয়ে উঠেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।মহাসড়ক অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছে তারা। এসময় মহাসড়কে ক্রিকেট খেলতেও দেখা যায় তাদের।
বুধবার(১০ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অবরোধের ফলে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যান চলাচল বন্ধ থাকায় ফাঁকা রাস্তায় ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর বিকাল ৫ টার দিকে ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুরোধে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে মূল ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীরা দলে দলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভে ব্যানার পোস্টার হাতে শিক্ষার্থীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘স্বাধীন এই বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘১৮ সালের পরিপত্র, পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাবৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মো. শিমুল হোসেন বলেন, ‘এই বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা মানি না। কোটার কারণে মেধাবীরা সঠিক মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ৮০ পেয়েও চাকরি পাবে না, আর কোটাধারীরা সহজেই চাকরি পাবে। এর ফলে যোগ্য প্রার্থীরা বৈষম্যের শিক্ষা হচ্ছে।’
মেহেদী হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন ‘বৈষম্য দূর করতেই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, কিন্তু আজকে আমার সোনার বাংলায় সেই বৈষম্যকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাহলে আমরা কি পেলাম, আমরা এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি।’
আন্দোলনরত এক নারী শিক্ষার্থী বলেন ‘কোটার মাধ্যমে নারীদেরকে ছোট করা হচ্ছে। আমি নারী কোটা চাইনা৷ আমার যদি যোগ্যতা থাকে তাহলে সেই যোগ্যতা দিয়েই সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাতে পারবো,কোনো বিশেষ সুবিধা নিয়ে নয়।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন ‘আপিল বিভাগ আগামী এক মাসের জন্য কোটা বহালের রায় স্থগিত করেছে। এই রায়েই আমরা সন্তুষ্ট নই,আমরা এটির স্থায়ী সমাধান চাই। আমরা চাই সরকারের নির্বাহী বিভাগ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সকল ধরনের সরকারি চাকুরিতে প্রতিবন্ধী ও উপজাতিদের জন্য সর্বোচ্চ ৫% কোটা বহাল রাখুক। এই বিষয়টির সুস্পষ্ট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাবো না।’
এদিকে মহাসড়ক অবরোধের ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল অংশের দুই পাশে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে দিয়েছেন।এখন যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটাপদ্ধতি বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই আন্দোলনে নেমেছেন চাকরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর