
যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ফের বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৫ ঘণ্টায় ৭ সে.মিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাজিপুর পয়েন্টে ৭ সে.মিটার বিপদসীমার বেড়ে ২০
সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফের পানি বাড়ায় ভাঙনকবলিত ও বানভাসিদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ ১৫দিন পানিবন্দি অবস্থায় থাকায় বানভাসিদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কাজকর্ম না থাকায় খাদ্য চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকটের কারণে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
বন্যা কবলিত এলাকায় স্যানিটেশন অবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় নারীদের চরম সমস্যা হচ্ছে। যাতায়াত ব্যবস্থার সমস্যা চরম দুর্ভোগে রয়েছে। অনেক বুক পানি পার দিয়ে যাতায়াত করছে। রাস্তা ভেঙ্গে অনেক স্থানে প্লাবিত হচ্ছে। জেলার ৫ উপজেলার ৩৪ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। কৃষকের সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে পড়েছে। গো-খাদ্যের সংকটও চরমে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাত্র ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও অনেক পরিবার সেই ত্রাণ থেকেও বঞ্চিত রয়েছে।
অন্যদিকে পানি বাড়ায় ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে যমুনা অরক্ষিত অঞ্চলের বাসিন্দাদের। বর্তমানে জেলার পাঁচটি উপজেলার অন্তত অর্ধশত পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী, তেকানী, নিশ্চিতপুর, সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন, গাছাবাড়ী, এনায়েতপুরের আড়কান্দি, কৈজুরী, পাঁচিল, চৌহালীর ভুতের মোড়ে প্রতিদিন বসতভিটা বিলীণ হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড মাত্র কয়েকটি পয়েন্টে কিছু কিছু জিও ব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা করছে।
মোহনপুর এলাকার বাসিন্দা মালতী রানী জানান, ঘরের মধ্যে হাঁটু পানি, ঘরের বাইরে বুক পানির উপরে। ঘর থেকে বের হতেও পারি না। চৌকির উপর চৌকি তুলে পরিবার নিয়ে কোনো রকম বেচে আছি। স্বামীর কাজ না থাকায় খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। সকালে মুড়ি খেয়ে থাকি। দুপুরে একবেলা রান্না করা হয়। এতো কষ্টে থাকলেও কেউ খোঁজ নেয় না। একই গ্রামের লোকমান হোসেনসহ অনেকে জানান, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। সকালে বাড়ী থেকে সাঁতার কেটে বের হই। আবার সন্ধ্যায় সাঁতার কেটে বাড়ী যাই। হাত পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে।
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন ঠান্ডু জানান, পানি বাড়ায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। একদিকে ইউনিয়নটি বন্যা কবলিত অন্যদিকে তীব্র ভাঙন। দুই দুর্যোগ মাথায় নিয়ে কাওয়াকোলাবাসী দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জে পয়েন্টে ৭ সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা ধীরগতিতে পানি বাড়তে পারে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর