
যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জে পয়েন্টে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে। যমুনার পানি এখনো বিপদসীমার ৪৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি ও ভাঙন কবলিতদের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। প্রায় ১৫দিন যাবত একটানা পানির মধ্যে থাকায় নানা সংকট দেখা দিয়েছে পানিবন্দিদের।
বন্যার পানিতে ইতোমধ্যে জেলায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। কাজ কর্মহীন বানভাসি মানুষ চিড়া-মুড়ি খেয়ে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। শিশু খাদ্যের অভাবে শিশুরা মুটিয়ে যাচ্ছে। গো-খাদ্যের সংকটের কারণে আমাদের পশু শুকিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পানিতে থাকার কারণে বসতভিটাসহ আসবাবপত্রে পচন ধরতে শুরু করেছে। অর্ধ শতাধিকের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ত্রাণ বা সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় বানভাসিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অন্যদিকে প্রতিদিন ভাঙ্গনে বসতভিটা হারিয়ে মানুষজন নি:স্ব হয়ে পড়ছে। তাদের অভিযোগ ভাঙন অব্যাহত থাকলেও পাউবো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। জনপ্রতিনিধিরাও বলছে সরকার থেকে যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা বানভাসিদের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল।
শহরের বাঐতারা গ্রামের বানভাসিরা জানান, আমাদের তিন-চারটা গ্রাম ১৫দিন যাবত পানি বন্দী। তাঁত কারখানা তলিয়ে গেছে। সবাই বেকার হয়ে পড়েছে। আর মজুদ ছিল সব শেষ।
এখন অনেক পরিবার চিড়া-মুড়ি খেয়ে থাকে। বিশুদ্ধ পানি থাকায় অনেকে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা এই এলাকায় পৌঁছায়নি। তাদের দাবী প্রতি বছর আমাদের বন্যায় ভুগতে হয়। আশপাশে কোনো আশ্রয় কেন্দ্রেও নেই যেখানে আশ্রয় গ্রহণ করা যাবে।
ভাঙন কবিলতারা জানান, প্রতিদিন ভাঙ্গনে বসতভিটা বিলীন হচ্ছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। প্রতিদিন ভাঙ্গনে খাসরাজবাড়ী, কাওয়াকোলা, কৈজুরী, পাঁচিল, ভুতের মোড় এলাকায় ফসলি জমিসহ চিরচেনা বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। মানুষজন নি:স্ব হয়ে যাচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নে ২৩ হাজার ৩০৬টি পরিবারের এক লাখ ৩ হাজার ৫৯৪ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যাদুর্গত এসব মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৩৩ টন চাল, ৫ লাখ টাকা ও ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বন্যায় জেলার সদর, শাহজাদপুর ও চৌহালীতে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নৌকা ডুবে চারজন ও পানিতে ডুবে আরও চারজন মারা গেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সবসময় সতর্কবস্থানে রয়েছেন। চরাঞ্চলসহ অনেকস্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা সাধ্যমতো জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর