সালটা সম্ভবত ২০১১। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মৌখিক পরীক্ষার সামনে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর একজন মেয়ে পরীক্ষার্থী হাজির হলো।
জানা গেল তার বাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। বাবা ওই এলাকায় একজন হতদরিদ্র কৃষক। একটা ভাঙাচোরা প্রাইমারি স্কুল আছে। শিক্ষক আছেন দুজন। সেই স্কুল থেকে সে পাস করে রাঙামাটি শহরে এসে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায়ও সে পাস করে। এরপর অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেছে উত্তরবঙ্গের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অবাক হয়ে জানতে চাই, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নয় কেন? উত্তরে জানা গেল সে লিখিত পরীক্ষায় টিকেছিল কিন্তু ফাইনাল লিস্টে টিকেনি। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটায়ও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেখানেও হয়নি। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ শতাংশ কোটা বরাদ্দ ছিল তখন। সেই পাঁচ শতাংশ আসে নির্বাচনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মূল তালিকা থেকে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়েও একই ব্যবস্থা। ছাত্রীটি শেষমেশ ভর্তির সুযোগ পেল উত্তরবঙ্গের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনার্স মাস্টার্স দুটি পরীক্ষায়ই তার ফলাফল খুবই ভালো। এরপর প্রস্তুতি নিয়ে সে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে লিখিত অংশে পাস করে মৌখিক পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষার সদস্যদের সামনে লিখিত পরীক্ষার কোনো নম্বর থাকে না। বোর্ডের সভাপতিসহ মোট পাঁচজন সদস্য থাকেন। সবাই পৃথক পৃথকভাবে নম্বর দেন। এরপর সব গড় করে লিখিত পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে যোগ হয়ে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে জাপানে গেলে সেই মেয়ের সঙ্গে আবার দেখা। সে-ই আমার প্রটোকল অফিসার। নিজ থেকে পরিচয় দিয়ে জানাল তার মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে আমি ছিলাম। এও জানাল আমি তার কাছে কী কী জানতে চেয়েছিলাম। চমৎকৃত হই সেই দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের মেয়েটা বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ফরেন সার্ভিসের একজন অফিসার। এর বছর দুই পর তার সঙ্গে দেখা আমাদের ফরেন সার্ভিস একাডেমির এক প্রশিক্ষণ কোর্সে। জানাল সে জাপানে তার মেয়াদ শেষ করে এখন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত আছে। পরবর্তী পোস্টিং কোথায় এখনো সে জানে না। এরপর তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই।
বর্তমানে দেশে একটি কোটাবিরোধী আন্দোলন চলছে।আন্দোলনকারীদের দাবি কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সব নিয়োগ ‘মেধার’ ভিত্তিতে দিতে হবে। আন্দোলনকারী একজন মেয়ে টিভি পর্দায় বলল, ‘মেয়েরা এখন ছেলেদের সঙ্গে সঙ্গে অনেক এগিয়েছে, তাদের কোটার প্রয়োজন নেই। ’ এই মেয়েটা দেশের বর্ণিত শ্রেণির মেয়েদের কথা কি জানে? সে কি জানে আমাদের হাওর, দুর্গম বা দ্বীপাঞ্চলের পড়ুয়ারা কত কষ্ট ও দারিদ্র্যের মধ্যে থেকে লেখাপড়া করে? না, জানে না। দুর্ভাগ্য হচ্ছে এরা দেশের সবাইকে নিজেদের দৃষ্টিতে দেখে। তারা যেমন লাখ টাকা দামের মোবাইল ফোনের সঙ্গে জন্ম থেকেই পরিচিত; ঠিক সেভাবেই মনে করে দেশের সব মেয়েরা এই সুবিধা ভোগ করে। তারা বুঝতে পারে না, ঢাকা বাংলাদেশ নয়। সবাই তাদের মতো সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে না। এই দেশে যেমন চোখ ধাঁধানো প্রাচুর্য তেমন আছে দারিদ্র্য আর বৈষম্যের শিকার লাখ লাখ মানুষ। যেমন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্কুল আছে তেমন আছে চালা ছাড়া স্কুলও।
নানা কারণে সমাজের বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে চাকরি, শিক্ষা বা রাষ্ট্রের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য দেশে দেশে কোটাপ্রথা চালু ছিল এবং এখনো আছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের কালো মানুষদের জন্য শিক্ষালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে সেই দেশে একাধিক মামলা হয়েছে এবং তা আদালতের মাধ্যমে সুরাহা হয়েছে কোনো আন্দোলনের মাধ্যমে নয়। ভারতের কোটা পদ্ধতি অনেক ব্যাপক। সেখানে ৬০ শতাংশ সরকারি চাকরি কোটার মাধ্যমে পূরণ হয়। সেনাবাহিনীতেও এই কোটার মাধ্যমে সেনা সদস্য নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। একই ব্যবস্থা পাকিস্তানেও। দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ ইউরোপের অনেক দেশে নানা রকমের কোটা ব্যবস্থা ছিল এবং আছে। কোনোটা লিঙ্গবৈষম্য কমাতে, কোনোটা হয়তো বয়স্ক মানুষকে চাকরির সুযোগ করে দিতে। এই কোটা ব্যবস্থা সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চালু আছে। অন্যদিকে জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশসহ সব সদস্য দেশের জন্য কোটা সংরক্ষিত আছে যা কদাচিৎ পূরণ হয় কারণ বাংলাদেশের ‘মেধাবী’দের ওইসব চাকরিকে প্রবেশের যে মাপকাঠি আছে তা থাকে না। যার অন্যতম হচ্ছে ইংরেজি ছাড়াও অন্য আর একটি ভাষা জানা। সঙ্গে আছে কোনো একটি বিষয়ের ওপর একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া। রাজপথে স্লোগান দেওয়া আর এসব যোগ্যতা অর্জন করা ভিন্ন বিষয়। সেসব পদ সাধারণত পূরণ হয় ভারতসহ এ অঞ্চলের দক্ষ ও মেধাবীদের দিয়ে।
পাকিস্তান আমলে সেনাবাহিনীর কথা বাদ দিলেও সরকারি অন্যান্য চাকরিতে সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া তৎকালীন পূর্ব-বাংলার অধিবাসীদের জন্য বিভিন্ন সময়ে বাঙালি রাজনীতিবিদরা সরকারি চাকরিতে বাঙালিদের জন্য কোটা সংরক্ষণের জন্য দাবি করে ব্যর্থ হয়েছেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে পাকিস্তানি কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি পাওয়া ছিল বাঙালিদের জন্য সোনার হরিণ পাওয়ার মতো। তারপরও শ্রেফ মেধারগুণে কয়েকজন বাঙালি সর্ব পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন। এদের মধ্যে এ কে এম আহসান, শফিউল আজম, মনোওয়ারুল ইসলাম অন্যতম। আবার দু-একজন শীর্ষ তালিকায় স্থান দখল করা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি। কারণ পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর দৃষ্টিতে তারা ‘কমিউনিস্ট’ ছিলেন। আজ যারা বামপন্থি রাজনীতি করেন তারা কজনে জানেন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বামপন্থিদের কমিউনিস্ট নাম নিয়ে এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছিলেন?
পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানের প্রদেশগুলোর জন্য পৃথক একটি ক্যাডার সার্ভিস ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের ক্যাডার সার্ভিসের বেশির ভাগ সদস্য ছিল ভারত থেকে আসা উর্দুভাষী বিহারিরা। এই ইতিহাস আজ যারা রাজপথে কোটা বাতিলের নামে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের আন্দোলন করছেন হয়তো তাদের অজানা।
দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি চালু করেছিলেন। এটি তাদের জন্য কোনো উপহার ছিল না। এটি ছিল দেশের জন্য তাদের যে আত্মত্যাগ তার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। যারা সরকারি চাকরিতে কর্মরত ছিলেন তাদের দুই বছরের জ্যেষ্ঠতা দেওয়া হয়েছিল। এই সুযোগ অনেকেই নেননি কারণ তাদের যে মেধা বা দক্ষতা ছিল তাতে তারা ওই সুযোগ না নিয়েও ভালো অবস্থানে ছিলেন। ১৯৭২ সালে যখন আমাদের সংবিধান প্রণীত হয় তখন সংসদে নারীদের জন্য পনেরোটি আসন সংরক্ষিত রাখা হয়। দেশের অনগ্রসর অংশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা (কোটা) রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয় (২৮-৪ ও ২৯-৩) ১৯৭৫ সালের পর ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তবিধৌত এই বাংলাদেশে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যারা আন্দোলন করছে তাদের দাবি মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল করতে হবে। এই কোটা যদিও ত্রিশ শতাংশ তারা বলে ৫৪ শতাংশ। তারা হয়তো জানে না এ পর্যন্ত এই মুক্তিযোদ্ধা কোটার গড়ে ১২.০২ (২৭তম থেকে ৩০তম) শতাংশের বেশি ব্যবহৃত হয়নি। ১৯৮৮ সালে তা শূন্য শতাংশে নেমে এসেছিল। বাকিটা প্রয়োজনে মেধা তালিকা হতে পূরণ করা হয়। ২৭তম বিসিএস থেকে ৩০তম বিসিএসসের মেধা কোটার বাইরে অর্থাৎ মেধা তালিকায় চাকরি পেয়েছে গড়ে ৬৭ দশমিক ৮ শতাংশ। বর্তমানের প্রায় ৭০ শতাংশই সাধারণ তালিকা থেকে হচ্ছে। তারপরও অনেক পদ খালি থেকে যায় কারণ মেধাবী বা যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায় না।
২০১৮ সালে এমন একটি কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল। বাস্তবে তাও ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল আন্দোলন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে ১৯৭৫ সালের পট-পরিবর্তনের পর একাধিক প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে যাদের কাছে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ আর ‘বঙ্গবন্ধুু শব্দগুলো অনেকটা গালির মতো শোনায়। তারা হচ্ছে ওই প্রজন্ম যারা কথায় কথায় বলে ‘I hate Bangladesh’। দেশের হাওয়া-বাতাস খেয়ে মানুষ হওয়া এরা প্রথম সুযোগেই দেশত্যাগ করে অন্য দেশে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকত্ব গ্রহণ করার জন্য সুযোগ খোঁজে। এটি আমাদের সামস্টিক ব্যর্থতা।
মুক্তিযোদ্ধা কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের অনেকেরই মাথায় জাতীয় পতাকা ফেটি বা ব্যান্ড হিসেবে বাঁধা থাকে। তারা হয়তো জানে না ওই একটি পতাকার জন্য এই দেশের ত্রিশ লাখ মানুষ নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এই পতাকা ব্যান্ড হিসেবে বাঁধার জন্য নয় অন্তরে ধারণ করার জন্য আমাদের দিয়ে গিয়েছিল ওই শহীদরা। তারা হয়তো এও জানে না ১৯৭৫ সালের পর সব সামরিক-বেসামরিক সরকার অলিখিতভাবে এই কোটা ব্যবস্থা স্থগিত করেছিল। শ্রেফ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার ‘অপরাধে’ অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর দীর্ঘ প্রায় ত্রিশ বছর পর এই পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়। তিনি একুশ বছরের ক্ষতিটা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা তাদের পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত সম্প্রসারণ করেন তবে তাদের এই সুযোগ গ্রহণ করতে হলে মেধার স্বাক্ষর রাখতে হবে। এটি এমন নয় যে, একজন এসে দাবি করল সে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা মুক্তিযোদ্ধা তাকে চাকরি দেওয়া হোক। তাকে আগে মেধা যাচাইয়ের সব প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। তারপর ওই ধাপ পার হলে পরবর্তী ধাপে তাকে নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, একটি নির্বাচনি পরীক্ষায় এক শ জন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রাথমিক ধাপে উত্তীর্ণ হলো। সেই এক শ জন থেকে প্রথম ত্রিশজন চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পাবে। বাকি সত্তরজন বাইরে থেকে যাবে। তারা যদি সাধারণ তালিকায় আসতে পারে আসবে। এই যে যাদের জন্য কোটা সংরক্ষিত আছে তারা সবাই এই কোটার সুযোগ গ্রহণ করে চাকরিতে আসে না। তারা অন্যদের লাইনে দাঁড়িয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করে। খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত অনেকেই কর্মরত আছে যারা তাদের কোনো কোটা ব্যবস্থার সুবিধা নেননি। আবার পারিবারিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সমাজের একেবারে উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তানরা সরকারি চাকরির প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেন না। কারণ তারা তাদের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করে ভোগ-বিলাসে যা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির সন্তানরা পায় না; কিন্তু তারা কর্মজীবনের সব প্রতিযোগিতায় ভালো করে। কোটা ব্যবস্থা অযোগ্যদের ঢালাওভাবে সুযোগ দেয় তা কল্পনাপ্রসূত।
২০১৮ সালে বর্তমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের মতো আর একটি আন্দোলন হয়েছিল। সেটাও ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল চেয়ে। তখন দেশে একটি সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছিল। সেই আন্দোলনে যারা সম্পৃক্ত ছিল তারা কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছিল। দ্রুত সেই আন্দোলন তাদের হাতে চলে যায় এবং তা ভয়ানকভাবে একটি উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্ম দেয়। একপর্যায়ে এই আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা করে তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। ক্ষতি হয় কয়েক কোটি টাকার। তখন উপাচার্যের বাসভবনে চা পরিবেশন করার জন্য একটি কাপও অক্ষত ছিল না।
বর্তমানেও সেই একই রাজনৈতিক দলগুলো এই কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সমর্থন দিয়েছে। পরবর্তী দৃশ্যের জন্য জাতি অপেক্ষা করছে। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সংসদে এই কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা করেন। এই প্রেক্ষাপটে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করে। এতে সাতজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দেশের উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলা দায়ের করলে আদালত কোটার বিপক্ষে রায় দেয় যার অর্থ কোটা ব্যবস্থা বহাল থাকবে। এতে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আপিল করেন যা এখনো নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। আন্দোলনকারীরা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে নারাজ।
তারা এখনই তা বাতিল চান। তা কীভাবে সম্ভব তা কারও জানা নেই। একটি মামলার সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সমাপ্তি হয়েছে বলা যাবে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা তার পরিবারের সতেরোজন সদস্যের বিচারের জন্য যদি ত্রিশ বছর অপেক্ষা করতে পারেন তা হলে বর্তমান প্রজন্ম কেন কদিন অপেক্ষা করতে পারবে না। গত রবিবার একটি টিভি চ্যানেলে একজন আন্দোলনকারী নেতা আসল কথাটি বলে ফেললেন। সঞ্চালকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বেশ উচ্চ কণ্ঠে বললেন, এই সরকারের ওপর মানুষের আস্থা নেই, আদালতের ওপর আস্থা নেই। সরকার চাইলেই আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিতে পারে। মেধার কী ভয়াবহ বিচ্ছুরণ। এক নেতা আবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘নির্বাহী বিভাগ চাইলে জারি করতে পারে নতুন পরিপত্র’।
আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এমন পরিপত্র যে আদালত অবমাননার শামিল তা হয়তো সে বুঝতেই পারেনি। তাকে আবার ইন্ধন জুগিয়েছে কয়েকজন মতলবি আইনজীবী। তাদের উদ্দেশ্য সরকার এমন একটি পরিপত্র জারি করুক যা পরবর্তীকালে উচ্চ আদালতে বাতিল হয়ে যায় আর সৃষ্টি হয় নতুন সংকটের।
কদিন আগে আন্দোলনকারীদের একটি মিছিল হাই কোর্টের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিয়েছে। সরকার ও আদালত নিয়ে সেই আন্দোলনকারী যে কথাগুলো বলেছেন এমন কথা প্রতিদিন সরকার উৎখাতে ব্যস্ত দলগুলো বলে থাকে। যখন ঢাকায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলছিল তখন সেই আন্দোলন একপর্যায়ে ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। ২০১৮ সালের আন্দোলন দু-একজন স্বঘোষিত রাজনৈতিক নেতা সৃষ্টি করেছিল। এখন দেখার পালা বর্তমান আন্দোলন কজন এমন নেতা তৈরি করে। বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার যে সংস্কার প্রয়োজন, তা কেউ অস্বীকার করবে না। সব দেশে তাই করা হয়। তবে তা রাজপথ দখল করে মানুষকে জিম্মি করে কেন করতে হবে, তা আন্দোলনকারীদের চিন্তা করতে হবে। এই কোটা বা সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়মিতভাবে যৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে সংস্কার করা উচিত।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর