
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় কিস্তির টাকা জমা না দিয়ে সদস্যদের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বর্তমান পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক এর মাঠকর্মী সনজিব রবিদাসের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে,পরিবারের দারিদ্র্যতা আর অভাব ঘুচিয়ে নিতে উপজেলার চৌদার গ্রামের আসমা আক্তারসহ অনেক নারীই পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। সেই নারীদের স্বাবলম্বী হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বুক ভরা স্বপ্ন আর আশা সবই ধূলিসাৎ। সুদসহ ব্যাংকের সমুদেয় পাওনাকৃত টাকা পরিশোধের পরেও পুরো টাকাই ব্যাংকে বকেয়া থাকার অভিযোগ আসমা আক্তার নামের এক গৃহিণীর। তিনি জানান, ২০১৭ সালে ২০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করে প্রথম মাসে ১৮ শত টাকা কিস্তি ২০০ ও টাকা সঞ্চয় দেন সনজিব নামের মাঠকর্মীর কাছে । ঐ বছরের শেষের দিকে একেবারে ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বসাকুল্যে ২৩ হাজার ৬০০ টাকা দেন তিনি। টাকা নিয়ে হিসাব বইয়ে স্বাক্ষরও করেছেন সনজিব । পরে টাকা পরিশোধ হলে মামলার ভয় দেখিয়ে সেই হিসাব বই নিয়ে যান দায়িত্বরত আরেক মাঠকর্মী। সম্প্রতি ঋণ পরিশোধের ৫ বছর পর হঠাৎ আসমা জানতে পারে অফিসে তার টাকা জমা হয়নি । শুধু আসমা আক্তারই নন এমন আরও অনেক সদস্যই এ মাঠকর্মীর প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলেও জানা গেছে । এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের চৌদার কেন্দ্রের ২০ এর অধিক সদস্যদের কাছ থেকে কিস্তি আদায় করেছেন সনজিব। সদস্যরা নিয়মিত তার কাছে কিস্তি জমা দিলেও তিনি তা অফিসে জমা দেননি। টাকা পরিশোধ শেষে সদস্যদের হিসাব বইও হাতিয়ে নেন তিনি। কয়েকদিন পূর্বে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পাওনাকৃত টাকা আদায়ে কিস্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। সদস্যরা টাকা পরিশোধ করে ফেলেছেন বলে জানালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এতে করে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
আসমা আক্তার বলেন, আমার লোনের টাকা পরিশোধ শেষে হিসাব বই অফিসে নিয়ে এসেছে। পরে আর আমি কোন টাকা নেয়নি। হঠাৎ জানানো হয় আমার টাকা পরিশোধ হয়নি। এখন আমার সংসার ভাঙার উপক্রম হয়ে গেছে। তার হিসাব বই থেকে পিন খুলে পাতা তুলে ফেলারও অভিযোগ করেন তিনি। এসময় ফাতেমা আক্তার নামে আরেক সদস্য জানান,ঋণ পরিশোধ শেষে আমার সঞ্চয়ের ৯ হাজার টাকা জমা হয়। আমাকে ঋণ না দিয়ে আমার স্বাক্ষর নিয়ে সনজিব সঞ্চয়ের ৯ হাজার টাকা দিয়েছে। এখন অফিস বলতেছে আমার কাছে তারা ৪০ হাজার টাকা পাবে। এখন আমি কেমনে কি করমু?।
শামসুন্নাহার, শিউলি ও খাদিজাসহ আরও অন্যান্য সদস্যরা জানান, তারা অনেক আগেই লোনের পুরো টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে । তবুও তাদের বকেয়া রয়ে গেছে। বকেয়া পরিশোধ না করলে ম্যানেজার আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন। টাকা একবার পরিশোধ করেছি তা সনজিব নাকি জমা দেয়নি। এ নিয়ে অডিট হলেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সনজিবের মুঠোফোনে ব্যবহৃত নাম্বারে (০১৭৭৭১৩১৪৯৭৬) বারবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ফুলবাড়িয়া পৌর সদরের তার ভাড়া বাসায় খোঁজ নিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার এলাকার লোকজনের ভাষ্য, সনজিব অনলাইনে জুয়া খেলে সবই বিক্রি করে দিয়েছে।
পল্লি সঞ্চয় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান বলেন, তার ব্যাপারে হেড অফিস জানে। প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত মাঠকর্মী সনজিবের বিরুদ্ধে ৩ মাস পূর্বে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তিনি সাময়িক বরখাস্তও হয়েছিলেন। বর্তমানে সে ভোলায় কর্মরত আছে বলে তিনি জানান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট খুব দ্রুত জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, সনজিব প্রতারণা করে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছেন। যে-সকল সদস্যদের পাশ বইয়ে সনজিবের স্বাক্ষর আছে তারা টাকা ফেরত পাবে।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাবেরী জালাল বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে অফিসারকে সাথে নিয়ে যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর