ইউটিউবে ‘বদমাইশ পোলাপাইন’ সিরিজে অনলাইনভিত্তিক জুয়ার সাইটের প্রচারণায় অভিনেতা প্রত্যয় হিরণও টাকা পেতেন। তার ব্যাংক একাউন্টে এ টাকা জমা হতো। ডিবি পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগের তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রাজধানীর রমনা মডেল থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মো.শাহিদুল ইসলাম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে দ্যা আজাইরা লিমিটেডের পরিচালক রায়হান সরকার বিশাল, অভিনেতা প্রত্যয় হিরণ, ইউটিউবার আবদুল হামিদ ও তানভীর আক্তার নিলয়কে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রেপ্তার হন তারা। এ বিষয়ে মো.শাহিদুল ইসলাম বলেন, এ মামলায় প্রত্যয় হিরণসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ১৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, অনলাইন জুয়ার এজেন্ট ছিলেন ইউটিউবার আবদুল হামিদ। জুয়ার বিজ্ঞাপনের আড়ালে তিনি ওয়ানএক্সব্যাটকে ক্রিকেট খেলার ব্যাট হিসেবে উপস্থাপন করতেন। টেলিগ্রামে তার সাথে ফেলিক্সের ওয়ানএক্সবেট, বাবুএইটিএইট জুয়ার পরিচালনা সংক্রান্তে চ্যাটিং হয়। চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে সে দেশের বাইরে থেকে পরিচালনাকারীদের পক্ষে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব নেয়। যত বেশী বিজ্ঞাপন তত বেশী লাভ এ ভাবনায় তাদের মূল টার্গেট ছিল যেসব চ্যানেলের ফলোয়ারস, ভিউয়ারস ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের পরিচিত, সেই ব্যক্তিদের আইডিতে এই জুয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে জনপ্রিয় করে তোলা।
এরই ধারাবাহিকতায় দ্যা আজাইরা লিমিটেডের পরিচালক রায়হান সরকার বিশালের সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমে হামিদের পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে হামিদ, রায়হান সরকার বিশালকে অনলাইন জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপনের বিষয়ে বিভিন্ন প্রলুদ্ধকর তথ্য প্রদান করে এবং কৌশলে তাকে রাজি করান। এরপর এই চ্যানেলের অন্যতম অভিনয় শিল্পী প্রত্যয় হিরণের সাথে পরিচয় করে দেন।
চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, টাকার বিনিময়ে হামিদ কৌশলে বদমাইশ পোলাপাইন এপিসাইডের বিভিন্ন পর্বে অনলাইন জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন প্রদান করেন এবং একটি প্রমোশনাল কোড ব্যবহার করতে বলে যাতে চ্যানেল ব্যবহারকারীরা কমিশন পায়। এজন্য আসামি হামিদ অপর আসামী প্রত্যয় হিরণের ব্যাংক একাউন্টে বিভিন্ন সময়ে টাকা প্রদান করেন। আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে দেশের বাইরে অবস্থান করা অপরাধীদের সহায়তা করার জন্য সাধারণ জনগণকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে অর্থ লেনদেন করার অপরাধ করে।
২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ডিবি পুলিশ অনলাইনে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নজরদারি করতে থাকেন। তখন 'আজাইরা লিমিটেড' নামের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত 'বদমাইশ পোলাপাইন' নামে ধারাবাহিক নাটকের সিরিজের চতুর্থ মৌসুমের সব পর্বে অবৈধ জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন দেখতে পান। এ ঘটনার পর গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি একাধিক লিংকের পরিচালক, অর্থ বিনিয়োগকারী, অর্থ আত্মসাৎকারী, অভিনয় শিল্পী, লাইক শেয়ারকারীসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক জয় দেব জয়ধর বাদী হয়ে মামলা করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী হাবিবুল্লাহ বলেন, তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দিয়েছে। এখনো চার্জশিট দেখিনি, তাই বলতে পারব না তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। যেহেতু চার্জশিট এসেছে, আমরা এ মামলায় অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করব।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর