চলমান কোটা আন্দোলনে দেশব্যাপী গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন আন্দোলনকারীরা৷ এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে বঙ্গভবন অভিমুখে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এতে ঢাবি, জবি, শেকৃবি, সাত কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অংশ নেবেন।
শনিবার (১৩ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর অন্যতম আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, রবিবার সারা দেশজুড়ে আমরা গণপদযাত্রা করব এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব জেলা প্রশাসকের কাছে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন। এছাড়া সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, শেরে বাংলা কলেজসহ ঢাকার সব প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে এই গণপদযাত্রা শুরু হবে এবং রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
কোটা আন্দোলনের আরেক সমন্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনটিকে দমনের পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা যৌক্তিক দাবি জানিয়ে সরকারের করণীয় বলে আসছি। তারা আমাদের দাবি পূরণে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। কিন্তু সেটি না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে দমনের পরিকল্পনা করছে। তবে এ ধরনের কিছু করে থাকলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। আমাদের দাবি আদায় হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
আরেক সমন্বয় আসিফ মাহমুদ বলেন, পুলিশ আমাদের সংবিধানিক অধিকার আদায়ের পথে দেয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পুলিশ আন্দোলনে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে ছাত্রদের উসকে দিচ্ছে।
মামলার বিষয়ে রমনার জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তার কল রেকর্ড শুনিয়ে তিনি বলেন, ছাত্ররা সাঁজোয়া যানে কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করেনি। মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের দিয়ে মামলা করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটাপদ্ধতি বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেন।
টাকা কয়েক দিন আন্দোলনের পর গত ৯ জুলাই কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। পরের দিন হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে। তবে শিক্ষার্থীরা আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর