
পানিবন্দি অবস্থায় কাজ কর্মহীন বানভাসিদের খাদ্য ও অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। আর ভাঙ্গনে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ছে ভাঙ্গনকবলিতরা। এসব মহাসংকট নিয়ে গত ২০দিন যাবত দিন পার করছে যমুনা পাড়ের জেলা সিরাজগঞ্জের ৫টি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
জানা যায়, যমুনা নদীর পানি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে কমে বিপদসীমার ১৯ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় এখনো চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার বসতভিটা পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে। এক লাখ ৩ হাজার ৫৯৪ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বানভাসি অধিকাংশ মানুষ তাঁত শ্রমিক, দিনমজুর ও কৃষক। বন্যার মধ্যে কাজকর্ম না থাকায় বেকার বসে রয়েছে। এ কারণে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সংকটের কারণে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকেরা বিপাকে পড়েছে। গবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু আয়-রোজগার না থাকায় কোন চিকিৎসাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারছে না বানভাসিরা। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় এখনো চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। কলার ভেলা, প্লাস্টিকের ড্রামের ভেলা ও ছোট ছোট নৌকাই একমাত্র চলাচলের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের ১০ কেজি চাল কিছু মানুষ পেলেও অধিকাংশ বানভাসি বঞ্চিত রয়েছে। বন্ধ রয়েছে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল ও সহস্রাধিক তাঁত কারখানা। ফলে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার কৃষক ও শ্রমজীবীরা। অন্যদিকে বন্যার সময় নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় যমুনা পাড়ের মানুষের বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে পথের ফকির হয়ে যাচ্ছে।
মোহনপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ ও বুদ্ধিন জানান, নানা সংকট অক্টোপাসের মতো আমাদের ঘিরে ধরেছে। তাঁত কারখানা থাকায় আয় রোজগার নেই। খাবার কেনার টাকা নেই। পানি কমলেও পুরো এলাকার পানির নীচে রয়েছে। সবার নৌকা নেই। যাদের নৌকা আছে তারা চলাচল করতে পারছে আর যাদের নৌকা নেই তারা পানির মধ্যে দিয়ে সার্বক্ষণিক চলাচল করায় নারী-পুরুষ শিশু সকলের হাত পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়াসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। দেখা যায় দেড় দুই কিলোমিটার দূর থেকে এক-দুই কলস পানি এনে সারাদিন চলতে হয়। এছাড়াও গবাদি পশু নিয়েও সংকটে রয়েছি। তাদেরকে খাবার দিতে না পারায় গবাদিপশুগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে।
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বর্ণি গ্রামের কৃষক হাকিম শেখ বলেন, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। গরু-ছাগল নিয়ে বিপদে পড়েছি। ঠিকমতো গরু-ছাগলের খাবারও খাওয়াতে পারছি না। রান্না করতে না পারায় আমরাও ঠিকমতো খেতে পারছি না।
অন্যদিকে পানি কমলেও যমুনার অরক্ষিত অঞ্চল, কাজিপুরের খাসরাজবাড়ী, তেকানী, নিশ্চিতপুর, সদরের কাওয়াকোলা, গাছাবাড়ী, এনায়েতপুরের আড়কান্দি, জালালপুর, শাহজাদপুরের পাঁচিল ও চৌহালী উপজেলার ভুতের মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।
ভাঙন কবলিতরা বলছেন, প্রতিদিন বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে আমরা ফকির হয়ে যাচ্ছি। ঘর তোলার জায়গা না থাকায় স্তূপ করে রাখা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওমর ফারু জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার গবাদিপশু পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু যেন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত না হয় সে জন্য পাঁচটি মেডিকেল টিম গঠন করে কৃষক ও খামারিদের নানা পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
পানি বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা পানি কমবে। আর ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণ করা চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে যমুনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় পুরো রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর