জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ কিন্তু শিক্ষার্থীদের ওপরের হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আজ সন্ধ্যা সারে সাতটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা আগে মিছিল শুরু হয়। এর আগে আজ বিকেল ৪ টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের নেত্রীবৃন্দ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। এরপর সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন এলাকায় আসলে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায়৷
এসময় ছাত্রলীগের শাখা সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে হেলমেট পরিহিত অবস্থায় ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
দুই পক্ষের পূর্বঘোষিত পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচির বিষয়ে আগে থেকে জানা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে প্রক্টরের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের এভাবে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগ। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলা হয়েছে। আমাদের উপর এ নির্মম সন্ত্রাসী হামলার বিচার চাই।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ঘটনার আধঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবীর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় লন। সেখানে ১০ মিনিট অবস্থানের পর, একপর্যায়ে রসায় বিভাগের অধ্যাপক আওলাদ হোসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা আহত হন। আহত অধ্যাপককে প্রক্টার আলমগীর কবীর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে আসেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, আমার অধ্যাপক আহত হয়েছে। আমি মেডিকেলে যাব।
সংঘর্ষের দীর্ঘক্ষণ পরে প্রক্টর আসার সাথে সাথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তীব্র তোপের মুখে পড়েন তিনি। এসময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগ দাবি করেন এবং সেইসাথে তার ইন্ধনে এ হামলা হয়েছে বলে তারা দাবী করেন।
আন্দোলনকারীদের সূত্রে জানা যায়, তাদের মিছিলটি বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাইট অফ করে দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এসময় মিছিলে থাকা শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তবে এসময় দুপক্ষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইট পাটকেল ছুড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসতে দেখা যায়৷ এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশীদ জিতু, মাহফুজ ইসলাম মেঘকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি গুরুতর আহত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. অমিতাভ জানান, আমি ৮ টার সময়ে এসে অন্তত ২০-৩০ জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়েছি৷ রাত সাড়ে আটটায় মেডিক্যাল সেন্টারে সর্বশেষ তথ্যমতে, অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে, গুরুতর আহত অবস্থায় অন্তত ২০-২৫ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন ও সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার আহত হয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা নিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আরিফ সোহেল বলেন, আমরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু হল এলাকায় আসলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা চালায়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আগে থেকেই লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রস্তুত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আগে থেকে জানা সত্ত্বেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে৷
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে বের হয়েছি। শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল নিজে আক্রমণাত্মক হয়ে আমাদের উপর হাত তুলেছেন। তারা সকলে মিলে আমাদের হত্যার করার চেষ্টা করেছে। তারা আমাদের কাঁদার মধো মুখ ডুবিয়ে রেখেছিলো যাতে আনরা দম নিতে না পারি, আমাদেরকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে। এই হত্যাচেষ্টার বিচার এই স্বাধীন বাংলার মাটিতে করতে হবে।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. আলমগীর কবীর বলেন, প্রোগ্রামটি নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে শুরু করেছিলো। আমরা এদিকে আসছিলাম কিন্তু গাড়ি আটকা পড়ায় গাড়ি থেকে নেমে যতটুকু সময় লেগেছে এরমধ্যে এসব ঘটনা ঘটছে। আমরা পুরো বিষয়টা অবজার্ভ করছি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর