জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর মধ্যরাতে দ্বিতীয় দফায় হামলা করেছে জাবি শাখা ছাত্রলীগ ও বহিরাগতরা। এসময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী-পুলিশ-ছাত্রলীগ ত্রিমুখী সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক গুলিবিদ্ধ ও আরেক শিক্ষক সাত সাংবাদিক সহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সোমবার (১৬ জুলাই) দিবাগত রাত ১টা ৫০ মিনিটে এ হামলা হয়। এতে বহিরাগতসহ ছাত্রলীগের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেয়ার পরেও পুলিশের উপস্থিতিতে সেখানে ঢুকে তাদের মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, হামলাকারী ব্যক্তিদের অধিকাংশের মাথায় হেলমেট ও হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। এ সময় দুটি পেট্রোল বোমা ছুঁড়তে দেখা যায় তাদের। হামলা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়েন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান তারা।
পরবর্তীতে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে বিভিন্ন হল থেকে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী বেরিয়ে এসে ভিসির বাসভবন ভাঙচুর করে। সেসময় পুলিশ-ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও ছররা গুলি ছোড়ে।
হামলায় শিক্ষক, সাত সাংবাদিকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার লুৎফুল এলাহি গুলিবিদ্ধ হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এমরান জাহান গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তিনি ডান চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হবে।
আহত সাংবাদিকরা হলেন, জুবায়ের আহমেদ (একুশে টিভি), মেহেদি মামুন (বণিক বার্তা), আব্দুর রহমান সার্জিল (দৈনিক বাংলা), ওয়াজহাতুল ওয়াস্তি (জনকণ্ঠ), এস এম তাওহীদ (বাংলা ট্রিবিউন), মুশফিকুর রিজওয়ান (সময়ের আলো), সাকিব আহমেদ (দ্য সাউথ এশিয়ান নিউজ) ও মোসাদ্দেকুর রহমান (যুগান্তর)। আহত ও গুলিবিদ্ধরা এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গতকাল সন্ধ্যায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিলে প্রথম দফায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। এর প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা রাত পৌনে নয়টার দিকে উপাচার্য নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপাচার্যসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে আন্দোলনকারীরা তাঁদের বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
রাত ১২টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা মিলে আবারও হামলা করতে পারেন—এমন খবরে উপাচার্যের বাসভবন চত্বরে (সীমানাপ্রাচীরের মধ্যে) অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা উপাচার্যের বাসভবন চত্বরে আশ্রয় নেওয়ার ১০ মিনিট পর বাসভবনের সামনে বহিরাগত সন্ত্রাসীসহ শাখা ছাত্রলীগের দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের প্রাচীরের মূল ফটকের ওপাশ থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে কাচের বোতল ও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে হামলাকারীরা উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করে আন্দোলনকারীদের মারধর শুরু করেন। হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। তখন পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে লুৎফুল এলাহি আহত হন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর