
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে মানুষের কাছ থেকে নানা বাহানায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন স্থানীয় এক দম্পতি। উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের পশ্চিম ভবানীপুর ও বেলাগাও সহ বিভিন্ন গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নিয়ে এলাকা ছেড়েছেন এমন অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
এ নিয়ে এলাকাবাসীদের মধ্যে চরম হতাশা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। টাকা নিয়ে উধাও হওয়া দম্পতির বাড়ী পশ্চিম বেলাগাঁও গ্রামে। গত কয়েকদিন আগে এক ভুক্তভোগী নারী টাকা ফেরত চাইতে সালমা আক্তারের স্বামী আরশ আলীর বাড়ীতে গেলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সালমা আক্তার সহ তার স্বামীর বিরুদ্ধে। এনিয়ে ভুক্তভোগী নারী শিউলি আক্তার জুড়ী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর রাতের আঁধারে সালমা আক্তারের স্বামী আরশ আলী দুবাই পাড়ি জমিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
থানায় লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম বেলাগাও গ্রামের মৃত আলী আহমদের ছেলে দুবাই প্রবাসী আরশ আলীর সাথে প্রায় ১২ বছর আগে জাঙ্গীরাই গ্রামের তাহের আলীর ছেলে সালমা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে গ্রামের সহজ সরল মহিলাদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে সালমা।
এ সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে গ্রামের সহজ সরল মহিলাদের দিয়ে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে টাকা উত্তোলন করে হাতিয়ে নিতে থাকে। টাকা উত্তোলন করার পর কয়েকজনের কিস্তি পরিশোধ করলেও বেশিরভাগ মানুষের কিস্তি না দিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করে। সর্বশেষ অর্ধ কোটির অধিক টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন এ দম্পতি। লাপাত্তা হওয়ার চার মাস পর সালমা তার বাবার বাড়িতে আসলে সকল পাওনাদার তাদের পাওনা টাকা উদ্ধারে ধরনা দিতে থাকে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার বিচার সালিশ হলেও এর কোন সুষ্ঠু সমাধান হয়নি। এছাড়া বিভিন্ন মহিলা ও পুরুষদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান জিনিস হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে সালমা আক্তার ও আরশ আলী দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাদের ঘরে তালা ঝুলছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতির খবর ছড়িয়ে পড়লে আশেপাশের অসংখ্য নারী পুরুষ সেখানে জড়ো হন এবং তাদের সাথে প্রতারণার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। স্থানীয়রা জানান সালমা আক্তার প্রতারণা করে আলিশান বাড়ি তৈরি করেছেন। এছাড়া তার ঘরে রয়েছে দামি ফার্নিচারসহ এসি। বিলাসবহুল বাড়িটিকে ঘিরে এলাকায় রয়েছে নানা গুঞ্জন।
ভোক্তভোগী শিউলি আক্তার বলেন, আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে বিভিন্ন এনজিও থেকে ২৯ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নেন সালমা আক্তার। প্রথমে কয়েকটি কিস্তি পরিশোধ করলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন টালবাহানা করে কিস্তি বন্ধ করে দেন। টাকা নেওয়ার বিভিন্ন প্রমাণাদি আমার কাছে থাকা সত্ত্বেও কারো কাছে গিয়ে আমি কোন বিচার পাচ্ছি না।
বর্তমানে বিভিন্ন এনজিওর কিস্তির ভয়ে আমি বাড়ি ছাড়া হয়ে আছি। গত কয়েকদিন আগে টাকা ফেরত চাইতে সালমা আক্তারের স্বামী আরশ আলীর বাড়ীতে গেলে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে সালমা আক্তারসহ তার স্বামী। এনিয়ে আমি জুড়ী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর রাতের আঁধারে সালমা আক্তারের স্বামী আরশ আলী দুবাই পালিয়ে গেছে। আমি আমার টাকা ফেরত চাই।
এসময় স্থানীয় বাসিন্দা বিউটি আক্তার, মায়ারুন, সাহিদা আক্তার, ফরিদ আলী ও জালাল উদ্দিন বলেন, সালমা আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বাহানায় অনেক টাকা নিয়েছে। কিন্তু আমাদের টাকা পরিশোধ না করেই এখন লাপাত্তা। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই।
এ বিষয়ে সালমা আক্তার কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও অর্ধ কোটি টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, এ নিয়ে বেশ কয়েকবার বিচার সালিশ হয়েছে। বিচার সালিশে সালমা আক্তার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু নানা টালবাহানা মানুষের টাকা ফেরত দিচ্ছে না।
এ বিষয়ে জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা বলেন, শিউলি আক্তারের পাওনা টাকার বিষয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে শিউলি আক্তারকে ৭ লাখ টাকা দেওয়ার একটি রায় হয়েছিল। কিন্তু এটি আর পরে বাস্তবায়ন হয়নি।
জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মাইন উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর