দেড় মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি ফেনীর আলোচিত কাতার প্রবাসী আবদুল গফুর (৬০) হত্যা মামলার আসামীরা। পুলিশের নিরব ভূমিকার কারণে এজাহারনামীয় ৭ আসামিকে গ্রেপ্তার দাবিতে এ সাংবাদিক সম্মেলন করেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এ সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন নিহতের ছেলে রিয়াদ হোসেন রাজু।
এসময় সে জানান, গত ২৯ মে জেলার দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে স্থানীয় একদল দুর্বৃত্ত ওই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোডস্থ তাঁদের 'ভূইয়া ম্যানশনে' হামলা চালিয়ে পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ৯টি বৈদ্যুতিক মিটার খুলে নিয়ে যায়।
ওইসময় বাড়ির মালিক আবদুল গফুর এতে বাধা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তাঁর বুকে, পিঠে, পেটে ও তলপেটে কিল,ঘুষি, লাথি মেরে আহত এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে বার বার আঘাত করে।
রিয়াদ হোসেন রাজুর দাবি, একইসময় দুর্বৃত্তরা তাদের পরিবারের সকল সদস্য ও ভবনের ভাড়াটিয়াদের উপরও নির্যাতন চালায়।
ঘটনার দিন রাতের বেলায় আবদুল গফুর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁর পায়ুপথে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এরপর তাঁকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়ার একদিন পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে গত ১জুন সকালে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
একইদিন রাতের এঘটনায় মৃত আবদুল গফুরের পরিবারের পক্ষ থেকে দাগনভূঞা থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে তাঁরা পরদিন ফেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রট ফারহানা লোকমানের আদালতে এজাহার দায়ের করেন। আদালত দাগনভূঞা থানাকে এজাহারটি আমলে নিয়ে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। গত ৪ জুন এজাহারটি থানায় হত্যা মামলা হিসেবে রুজু হয়। যার নং ০৪, তাং-০৪.০৬.২৪।
মামলায় একই উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের মকবুল আহম্মেদের ছেলে জয়নাল আবেদীন মামুনকে প্রধান আসামি করে দাগনভূঞা পৌরসভার আমান উল্যাহপুর এলাকার নির্মল সাহার ছেলে চয়ন সাহা ও দহন সাহা, রুহিনী সাহার ছেলে নির্মল সাহা জগতপুর এলাকার আবদুল ওহাবের ছেলে আইয়ুব আলী, কালা মিয়ার ছেলে ছেরাজুল হক প্রকাশ হকসাব এবং রাজাপুর ইউনিয়নের কোরাইশমুন্সি বাজার সংলগ্ন আবদুল নবী গ্রামের খায়েজুল হকের ছেলে ইকবালের নাম উল্লেখ করে আরও ১০/১২জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে রিয়াদুল হোসেন রাজু আরও জানান, এর আগেও তাদের বাড়িটি দখলে নিতে এসব আসামিরা হামলার ঘটনা ও বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দিয়েছিলেন।
এরপরও আবদুল গফুর হত্যা মামলা দায়েরের পর প্রায় দেড়মাস অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি পুলিশ কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। ফলে আসামিরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং উপরন্তু অজ্ঞাত ব্যক্তিদের মোটরসাইকেলযোগে ভূইয়া ম্যানশনের সামনে পাঠিয়ে মহড়া ও হুমকি দিয়ে আসছে।
রিয়াদ হোসেন রাজু এসময় অজ্ঞাত ওই সন্ত্রাসীরা আমাদের হুমকি দিয়ে বলে 'তোদের পিতাকে হত্যা করার পর কি হয়েছে, এবার তোদের পরিনতিও পিতার মতোই হবে'।
এমতাবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে সাংবাদিক সম্মেলনে মৃত আবদুল গফুরের পরিবারের পক্ষ থেকে পিতা হত্যা মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান ছেলে রিয়াদ হোসেন রাজু।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মৃত আবদুল গফুরের দুই বোন ও এক ভাগিনা এবং অপর এক ছেলে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর