কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার পর পাল্টা ধাওয়া খেয়ে মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন শিবলী নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী। তাকে পিটিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর তাকে ক্যাম্পাস ছাড়া করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল সোয়া তিনটার দিকে সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, শিবলী নামে ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে এক হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও পুলিশ। তারা শিবলীকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হামলার ঘটনায় শিবলীকে কান ধরে উঠবস করার জন্য বলে। সেটি না করে শিক্ষকরা তাকে নিয়ে যেতে চাইলে তাদের ওপর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একাংশ লাঠিসোঁটা ও ইটের টুকরো নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় পুলিশের অন্তত ১০ সদস্য আহত হন।
বিএম কলেজের শিক্ষকরা এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্রদের নিক্ষেপ করা লাঠি ও ইটের আঘাতে তাদের ৮-১০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ব্রজমোহন কলেজ ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টে জড়ো হন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও ক্যাম্পাসে জড়ো হয়। উভয় পক্ষ ক্যাম্পাসে পৃথক মিছিল করে। তবে কোটা আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে গিয়ে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কয়েকজন কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রকে ক্যাম্পাসে পেয়ে মারধর করে। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে কোটা আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করে এবং একপর্যায়ে ধাওয়া দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে দীর্ঘক্ষণ কয়েকদফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, পাল্টাপাল্টি ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ৬-৭ জন আহতও হয়।
ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসে কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের অবস্থান শক্তিশালী হয়। তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাস এলাকায় কোণঠাসা করে ফেলে। পরে সেখান থেকে ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী বের হয়ে গেলেও শিবলী নামে ওই কর্মী ডিগ্রি হলের জামে মসজিদে আশ্রয় নেয়। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মসজিদে ঘিরে অবস্থান নেয়।
বিষয়টি জানতে পেরে কলেজ অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়া অন্যান্য শিক্ষক ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে মসজিদে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের কাছে যান। তাদের সাথে কথা বলে ছাত্রলীগ কর্মী ও কলেজের শিক্ষার্থী শিবলীকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করেন। তখন শিক্ষার্থীরা হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীকে কান ধরে উঠবস ও ক্ষমা চাইতে বলে। কিন্তু তা না করে পুলিশ ও শিক্ষকদের ব্যারিকেডের মধ্যেই ছাত্রকে নিয়ে অধ্যক্ষ ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তখন ছাত্ররা লাঠিসোঁটা নিক্ষেপ শুরু করলে শিবলীর মাথা ফেটে যায়। ঘটনা বেগতিক দেখে শিক্ষকরা সরে গেলেও পুলিশ শিবলীকে ঘিরে রাখে এবং সাথে নিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। তবে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হল কম্পাউন্ড থেকে শংকর মঠের সামনে পর্যন্ত পুলিশের পেছনে পেছনে যায় এবং লাঠিসোঁটা নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে শিবলি ও এক পুলিশ সদস্য রক্তাক্ত জখম হয়।
জানা গেছে, এ ঘটনায় বরিশাল মেট্রোপলিটনের উপ কমিশনার (দক্ষিণ), অতিরিক্ত উপ কমিশনারসহ (দক্ষিণ) প্রায় ৮-১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ আহত ছাত্রলীগ কর্মী শিবলীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ওই ছাত্রলীগ কর্মী সকালে আমাদের মারধর করে গেছে। ওরা সন্ত্রাসী। ওরা আমাদের অহিংস আন্দোলনে অস্ত্রসহ হামলা চালায়। আমাদের ওপর যারা আঘাত হানবে তাদের উচিত জবাব দেব।
বিএমপির উপ কমিশনার আশরাফ আলী ভূঞা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছি। আমরা সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করছি। হামলায় আমিসহ ৮-১০ জন পুলিশ সদস্য কমবেশি আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ঢাবি, জাবিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও কোটা সংস্কারের দাবিতে বরিশাল ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশালের সবগুলো কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর