
বগুড়ার শেরপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮জুলাই) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) তারিকুল ইসলাম বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সতেরজন নামীয় ব্যক্তি ছাড়াও আরো অসংখ্য অজ্ঞাত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৭ জুলাই) রাত থেকে শুরু হওয়া গতকাল দুপুর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন- আনোয়ার হোসেন (৩০), আল মাহমুদ নাঈদ (১৮), নাজমুল হাসান (২৪), তুষার ইমরান (২৪), শাহরিয়ার মোস্তাহিদ (২০), উজ্জ্বল হোসেন (৩৫) ও রুহুল আমিন (২৫)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১৭ জুলাই) বেলা সোয়া একটার দিকে শহরের শেরপুর শহীদিয়া আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ধুনটমোড় এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেন। এনিয়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এরইজেরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি তাদের ছোঁড়া ককটেল ও ইট-পাটকেলে শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজাসহ এগারো পুলিশ সদস্য আহত হন। তাঁরা স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে ককটেলের খোসা, লাঠি-সোটা, কয়েকটি ইটের টুকরা উদ্ধার করা হয়েছে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত: বুধবার পুলিশ ও কোটাবিরোধীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। এরমধ্যে গুরুতর অন্তত বিশজন স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ও বগুড়ায় শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে এই সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার একাধিক স্থানে বিক্ষোভের চেষ্টা করলেও তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এসময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে দূর-পাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। শহরের সিংহভাগ দোকান-পাটও বন্ধ ছিল। ব্যাংক-বিমা খোলা থাকলেও লোকজনের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। তাই লেনদেন তেমন একটা হয়নি। অপরদিকে দেশে নৈরাজ্য পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ-সমাবেশ করা হয়েছে। দলের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। এতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ছাড়াও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
জানতে চাইলে শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেইসঙ্গে অভিযুক্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার বিকেলেই বগুড়ায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত হয়েছে। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর