কোটা আন্দোলনকে ঘিরে থমথমে পরিস্থিতি কাটলেও এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। সুনসান নীরব ক্যাম্পাসে কোন প্রকারে যেন বিশৃঙ্খলতা না ঘটে সে লক্ষ্যে সজাগ রয়েছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে অবস্থান নিয়েছেন তারা। কারফিউ শিথিল চলাকালীন ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে হালকা যান চলাচল এবং জন সাধারণের চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও অনেকটা জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। সন্ধ্যার পর কারফিউ শিথিল পরবর্তীকালীন কাউকেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় নি। এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেওয়া হবে, বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়েছেন। যদিও পূর্ববর্তী দিনগুলোর তুলনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম লক্ষ্য করা গেছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতল শুরু করাতে ক্যাম্পাস এলাকাতে বিকেল পর্যন্ত হাতেগোনা লোক দেখা গেছে। এছাড়া ছিল পথচারী। এদিকে একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারেও প্রশাসনিক ও দাফতরিক কার্যক্রম চলেছে সকাল ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া পাশাপাশি কোন নিরপরাধ শিক্ষার্থী যেন ভবিষ্যতে কোন হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূর্বের মতো নিয়োজিত থাকবে এবং হলগুলোয় মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দেওয়াসহ পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন।
গত মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলগুলোর কক্ষগুলো সংস্কার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে এ লক্ষ্যে কাজ করছে।’
এতে ক্যাম্পাস ও হল খুলে দিতে এরই মধ্যে পাঁচ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেগুলো হলো-
ঢাবি ক্যাম্পাসে কোনো নিরাপরাধ শিক্ষার্থী যেন ভবিষ্যতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, সেটা নিশ্চিত করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে অবস্থান করবেন, যাতে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে না পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূর্বের মতো নিয়োজিত থাকবে। দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলের কক্ষগুলো সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরই মধ্যে এই লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সেজন্য শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কাম্য। হলগুলোতে শুধু বৈধ শিক্ষার্থীরাই থাকবে। প্রশাসনের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী আবাসিক হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এর আগে গত ১৭ জুলাই সিন্ডিকেটের এক জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এছাড়া হলে অবস্থানরত সকল শিক্ষার্থী সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরপরই পুরোপুরিভাবে হল ছাড়তপ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ খবর