
অনেক যুবককে বলতে শোনা যায়, গান না শুনলে ঘুম আসে না। গান না শুনলে মাথা ব্যথা করে। বুক চিনচিন করে। খাওয়া ছাড়া থাকতে পারবো, গান শোনা ছাড়া থাকতে পারবো না। ইসলাম এ গান শোনার বিষয়ে কী বলে? আজ এ বিষয়েই কথা বলবো। শেষ জমানায় গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের রেওয়াজ চলবে, উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু বা ভূমিধস বা চেহারা বিকৃতির আজাবের। (তিরমিজি ২২১৩)
শেষ জমানায় গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের রেওয়াজ চলবে, উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু বা ভূমিধস বা চেহারা বিকৃতির আজাবের। (তিরমিজি ২২১৩)
মুফতি আবদুল্লাহ তামিম
সুরা লুকমানে আল্লাহ বলেন, কতক মানুষ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশে অজ্ঞতাবশত অবান্তর কথাবার্তা (গান-বাজনা) ক্রয় করে আর আল্লাহর পথকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি। (সুরা লুকমান ৬)
গান-বাজনা সম্পর্কে নবীজি অনেকবার সতর্ক করেছেন। আজ সে হাদিসগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, গান নিষেধ ও হারাম হওয়া সম্পর্কিত হাদিসগুলো মুতাওয়াতির। এ সম্পর্কে ১৩ জন সাহাবি থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তারা হলেন, আবু মালিক আশআরী, সাহাল ইবনে সাদ, ইমরান ইবনে হুসাইন, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবু হুরাইরা, আবু উমামা আলবাহিলি, আয়েশা, আলী ইবনে আবী তালিব, আনাস ইবন মালিক, আব্দুর রহমান ইবন সাবিত, আল গাজী ইবনে রবীয়া ও আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহুম। (ইগাসাতুল লাহফান ১/২৬০)
তন্মধ্যে থেকে নিম্নে কিছু হাদিস পেশ করা হলো- এক. হজরত আবু মালিক আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي الْخَمْرَ ، يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا ، يُعْزَفُ عَلَى رُءُوسِهِمْ بِالْمَعَازِفِ وَالْمُغَنِّيَاتِ ، يَخْسِفُ اللَّهُ بِهِمْ الْأَرْضَ ، وَيَجْعَلُ مِنْهُمْ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ
অর্থ: আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমণীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জমিনে ধসিয়ে দিবেন। আর তাদের কিছুকে বানর ও শূকর বানিয়ে দিবেন। (ইবন মাজাহ ৪০২০ সহিহ ইবনে হিব্বান ৬৭৫৮)
দুই. সাহল ইবন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
سَيَكُوْنُ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ خَسْفٌ وَقَذْفٌ وَمَسْخٌ ، قِيْلَ: وَمَتَى ذَلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ: إِذَا ظَهَرَتِ الْمَعَازِفُ وَالْقَيْنَاتُ অর্থ:অচিরেই শেষ যুগে দেখা দিবে ভূমি ধস, নিক্ষেপ ও বিকৃতি। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রসুল! তা কখন? তিনি বললেন, যখন বাদ্যযন্ত্র ও গায়ক-গায়িকারা বেশি হারে প্রকাশ পাবে। (ইবনু মাজাহ ২/১৩৫০)
তিন. ইমরান ইবন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
فِي هَذِهِ الأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ . فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَتَى ذَاكَ قَالَ إِذَا ظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ অর্থ: এ উম্মতের জন্য ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের আজাব রয়েছে। জনৈক মুসলিম ব্যক্তি তখন বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ, কখন হবে তা? তিনি বললেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে এবং মদ্যপান দেখা দিবে। (তিরমিজি ২২১৫)
চার. আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন,
أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ﷺ نَهَى عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَالْكُوبَةِ وَالْغُبَيْرَاءِ وَقَالَ كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ অর্থ:রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শরাব পান করতে, জুয়া খেলতে, ঢোল বা তবলা বাজাতে এবং ঘরের তৈরি শরাব পান করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম। (আবু দাউদ ৩৬৪৪)
অনুরূপ হাদিস মুসনাদে আহমাদে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে।
পাঁচ. আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا اتُّخِذَ الْفَئُْ دُوَلاً، وَالأَمَانَةُ مَغْنَماً، والزَّكَاةُ مَغْرَماً، وَتُعُلَّمَ الْعِلْمُ لِغَيْر الدِّين، وَأَطَاعَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ، وَعَقَّ أُمَّهُ، وأَدْنَى صَدِيقَهُ، وأُقْصَى أبَاهُ، وظَهَرَتِ الأصْوَاتُ فى المسَاجدِ، وسَادَ الْقَبيلَةَ فَاسِقُهُمْ، وَكانَ زَعِيمَ الْقَوْمِ أَرْذَلُهُمْ، وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مخَافَةَ شَرِّهِ، وَظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالمَعَازِفُ، وشُرِبَتِ الْخَمْرُ، وَلَعَنَ آخِرُ هذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلهَا، فَلْيَرْ تَقِبُوا عِنْدَ ذلِكَ رِيحاً حَمْرَاءَ، وَزَلْزَلَةً وَخَسْفاً، وَمَسْخاً، وَقَذفاً، وآيَاتٍ تتابع كَنِظَامٍ بَالٍ قُطِعَ سِلْكُهُ فَتَتَابَعَ
অর্থ: গনিমত সম্পদ যখন ব্যক্তিগত সম্পদ বলে গণ্য করা হবে, যাকাত হবে জরিমানা বলে, দীনি উদ্দেশ্য ছাড়া ইলম অর্জন করা হবে, পুরুষরা স্ত্রীদের আনুগত্য করবে, এবং মায়ের অবাধ্য হবে, বন্ধুদের নিকট করবে আর পিতাকে করবে দূর, মসজিদে শোরগোল করবে, পাপাচারীরা গোত্রের নেতা হয়ে বসবে, নিকৃষ্ট লোকেরা সমাজের নেতা হবে, অনিষ্টের আশঙ্কায় একজনকে সম্মান করা হবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে, মদ্যপান দেখা দিবে, উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদেরকে অভিসম্পাত করবে তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু, ভূমিকম্প, চেহারা বিকৃতি, পাথর বর্ষণের আজাবের এবং আরও আলামতের যা পরপর নিপতিত হতে থাকবে, যেমন একটি পুরান হারের সূতা ছিড়ে গেলে একটার পর একটা দানা পড়তে থাকে। (তিরমিজি ২২১৪)
ছয়. হজরত আবু উমামা আলবাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لاَ تَبِيعُوا الْقَيْنَاتِ وَلاَ تَشْتَرُوهُنَّ وَلاَ تُعَلِّمُوهُنَّ وَلاَ خَيْرَ فِي تِجَارَةٍ فِيهِنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ অর্থ: গায়িকা দাসী বিক্রি করবে না। এবং কিনবেও না। তাদের গান শিক্ষা দিবে না। এদের ব্যবসায়ে কোনো কল্যাণ নাই। এদের মূল্য হারাম। (তিরমিজি ১২৮৫)
সাত. হজরত আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা (রা.)-এর নিকট গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে ছিল আরও একজন। তখন লোকটি বলল, হে উম্মুল মুমিনিন! আমাদেরকে ভূমিকম্প সম্পর্কে বলুন। তখন আয়েশা (রা.) বললেন,
إِذَا اسْتَبَاحُوا الزِّنَا ، وَشَرِبُوا الْخَمْرَ ، وَضَرَبُوا بِالْمَغَانِي ، وَغَارَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي سَمَائِهِ فَقَالَ لِلأَرْضِ : تَزَلْزَلِي بِهِمْ ، فَإِنْ تَابُوا وَنَزَعُوا ، وَإِلا هَدَمَهَا عَلَيْهِمْ
অর্থ: যখন লোকেরা ব্যভিচারকে বৈধ মনে করবে, মদ পান করবে এবং গানের চর্চা করবে আর আল্লাহ নিজ আকাশে ক্রোধান্বিত হবেন তখন তিনি জমিনকে বলবেন, এদেরকে নিয়ে প্রকম্পিত হও, যদি তারা তওবা করে আর এসব ছেড়ে দেয় (তাহলে নয়)। অন্যথায় এদেরকে ধ্বংস করে দাও। (আল উকুবাত লি আবিদ্দুনয়া ৬)
আট. আলি ইবন আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا فَعَلَتْ أُمَّتِي خَمْسَ عَشْرَةَ خَصْلَةً حَلَّ بِهَا الْبَلاَءُ ” . فَقِيلَ وَمَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ” إِذَا كَانَ الْمَغْنَمُ دُوَلاً وَالأَمَانَةُ مَغْنَمًا وَالزَّكَاةُ مَغْرَمًا وَأَطَاعَ الرَّجُلُ زَوْجَتَهُ وَعَقَّ أُمَّهُ وَبَرَّ صَدِيقَهُ وَجَفَا أَبَاهُ وَارْتَفَعَتِ الأَصْوَاتُ فِي الْمَسَاجِدِ وَكَانَ زَعِيمُ الْقَوْمِ أَرْذَلَهُمْ وَأُكْرِمَ الرَّجُلُ مَخَافَةَ شَرِّهِ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ وَلُبِسَ الْحَرِيرُ وَاتُّخِذَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَلَعَنَ آخِرُ هَذِهِ الأُمَّةِ أَوَّلَهَا فَلْيَرْتَقِبُوا عِنْدَ ذَلِكَ رِيحًا حَمْرَاءَ أَوْ خَسْفًا وَمَسْخًا
অর্থ: আমার উম্মত যখন এ পনেরটি বিষয়ে লিপ্ত হবে তখন তাদের উপর মুসিবত নিপতিত হবে। জিজ্ঞেস করা হল, সেগুলো কি ইয়া রসুলাল্লাহ? তিনি বললেন, যখন গনিমত পরিণত হবে ব্যক্তিগত সম্পদে, আমানত পরিণত হবে লুটের মালরূপে, যাকাত গণ্য হবে জরিমানারূপে, পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের অনুগত হবে আর মাদের হবে অবাধ্য, বন্ধুদের সাথে তো সদাচরণ করবে অথচ পিতার সঙ্গে করবে দুর্ব্যবহার, মসজিদে শোরগোল করা হবে, নিকৃষ্টতম চরিত্রের লোকটি হবে তার সম্প্রদায়ের নেতা, কেবল অনিষ্টের ভয়ে কোন ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে, মদপান করা হবে, রেশম বস্ত্র পরিধান করা হবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের রেওয়াজ চলবে, উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে তখন তোমরা অপেক্ষা করবে অগ্নিবায়ু বা ভূমিধস বা চেহারা বিকৃতির আজাবের। (তিরমিজি ২২১৩)
বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত নাফে (রহ.) থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার চলার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. বাঁশির আওয়াজ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই কানে আঙুল দিলেন। কিছু দূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে! এখনো কি আওয়াজ শুনছো? আমি বললাম হ্যাঁ। অতঃপর আমি যখন বললাম, এখন আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙুল সরালেন এবং বললেন, একদা রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন। (মুসনাদে আহমদ ৪৫৩৫; আবু দাউদ ৪৯২৪ )
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর