
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে পুলিশের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার মামলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীসহ ৬৬৪ জনকে এ মামলায় আসামী করা হয়।
এ মামলায় মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ, বিএনপি নেতা হাফেজ আজিজুল হক ও ইউপি চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ূমসহ ৬৪ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে আরও ৬০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে এ মামলায়। গৌরীপুর থানার এস আই মোঃ অনিক ইসলাম বাদী হয়ে রবিবার (২১ জুলাই) এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে- গত শনিবার (২০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে স্থানীয় কলতাপাড়া বাজার এলাকায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে সশস্ত্র অবস্থায় সরকার বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন আসামীরা। খবর পেয়ে গৌরীপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অবরোধকারীদের রাস্তা ছেড়ে দেয়াড় অনুরোধ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর বেপরোয়াভাবে সশস্ত্র হামলা চালায়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা গৌরীপুর থানার সাবেক ওসি সুমন চন্দ্র রায়ের ডান পায়ের উরুতে গুলিবিদ্ধ করে তাকে রক্তাক্ত জখম করে।
এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে ধাওয়া করলে পুলিশ স্থানীয় তাল্লু স্পিনিং মিলে আশ্রয় নেয়। পরে আন্দোলনকারীরা ওই মিলে প্রবেশ করে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মিল ভাঙচুর করার পাশাপাশি পুলিশের দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। এসময় পুলিশ গুলি ছোড়লে ফের দুপক্ষের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়।
আহত হন গৌরীপুর থানার ওসি সুমন চন্দ্র রায়সহ দুপক্ষের অন্তত ৩০ জন।নিহতরা হলেন ডৌহাখলা ইউনিয়নের চূড়ালি গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে বিপ্লব (১৯), রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও গ্রামের হেলিমের ছেলে রাকিব (১৯) ও কাউরাট আনোয়ার উদ্দিনের ছেলে জুবায়ের (২১)।প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের এ সংঘর্ষ চলে। এসময় হামলাকারীরা তাল্লু স্পিনিং মিলে গোডাউনে নিরাপদে রাখা গৌরীপুর থানার দুটি ডাবল কেবিন পিকআপ গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এ অগ্নিকাণ্ডে ওই স্পিনিং মিলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পরে পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে টহল দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
গুলিবিদ্ধ ওসি সুমন চন্দ্র রায় ঢাকায় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ঘটনার পর তাকে গৌরীপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে ময়মনসিংহ পুলিশ অফিসে সংযুক্তি করা হয়েছে। গৌরীপুর থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেছেন মোঃ হাসান আল মামুন।
গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সুমন মিয়া সাংবাদিকদের জানান- আন্দোলনের নামে নাশকতা সৃষ্টিকারী দুস্কৃতিকারীকাদের নিবৃত করতে গেলে ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হন গৌরীপুর থানার পুলিশ সদস্যরা।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাসান আল মামুন জানান- পুলিশের ওপর হামলার মামলায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
মামলার তদন্তকারী গৌরীপুর থানার এস আই মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান- গ্রেপ্তারকৃতদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের জন্য বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ সাহা সাংবাদিকদের জানান- কোটা আন্দোলনের নাম করে স্থানীয় জামাত-বিএনপি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে কলতাপাড়া বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে পুলিশের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। তিনি এ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর