ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হল উহুদ যুদ্ধ। এ যুদ্ধের প্রথম দিকে মুসলমানরা বিজয়ী হলেও শেষ দিকে কিছুটা অসতর্কতার কারণে তারা বাহ্যিকভাবে পরাজিত হয়। অনেক সাহাবী শহীদ হন। তবে এই যুদ্ধ সাহাবাদের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। এ যুদ্ধের পর থেকে তারা কখনো নবীর কোনো আদেশকে অবহেলা করেনি।
উহুদ যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
এই যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে। যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল বদর যুদ্ধে মুসলমানদের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর মুশরিকদের প্রতিশোধ পরায়ণ মনোভাবের কারণে।
বদর যুদ্ধে পরাজিত মুশরিক বাহিনী প্রতিশোধের জন্য মদিনায় আক্রমণের প্রস্তুতি নিলো। তিন হাজার সৈন্য নিয়ে তারা মদিনার দিকে রওয়ানা হলো। সৈন্য বাহিনীতে ছিল ৭০০ বর্ম, ২০০ ঘোড়া ও ৩ হাজার উট। যুদ্ধে পুরুষদের উৎসাহ দিতে ১৪জন নারীকেও সঙ্গে নিয়েছিল তারা।
রাসূল সা.-এর কাছে যুদ্ধের বার্তা পৌঁছালো যেভাবে
মহানবী সা.-এর চাচা আব্বাস রা. তখনো মক্কায় অবস্থান করছিলেন মুসলমানদের হয়ে। মুশরিকরা মদিনায় আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে রওয়ানা হওয়ার পর তিনি একজন দ্রুতগামী বার্তাবাহকের মাধ্যমে রাসূল সা. এর খবর পাঠালেন।
বার্তা পেয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য তিনি দুজনকে পাঠালেন। তারা এসে খবর দিলেন, মুশরিকদের সন্ত্রাসী বাহিনী মদিনার কাছাকাছি চলে এসেছে প্রায়।
সৈন্য বাহিনী প্রস্তুত করলেন রাসূল সা.
মুশরিক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলার জন্য সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে রাসূল সা. ১ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী তৈরি করলেন। তাদের নিয়ে মদিনার বাইরে প্রতিরোধ গড়লেন।
মুনাফিকদের তালবাহানা
যুদ্ধ শুরুর আগ মুহূর্তে মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ও তার মতো আরও ৩০০ জন তালবাহানা করে যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ালো। এ কারণে মুসলিম সৈন্য সংখ্যা মাত্র ৭০০-তে গিয়ে দাঁড়ালো। তিন হাজার বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্র ৭০০ জনের লড়াই। তবে সাহাবিরা মনোবল হারালেন না। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে পুরোদমে প্রস্তুতি নিলেন।
মুনাফিকরা যখন তালবাহানা করে যুদ্ধ থেকে নিজেদের দূরে গুটিয়ে রাখছিল, ঠিক তখনি ঈমানের বলে বলীয়ান দুই কিশোর সাহাবী উপস্থাপন করলেন এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত। যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য তারা রীতিমতো প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন।
কিশোর সাহাবি রাফে ইবনে খাদিজ ও সামুরা ইবনে জুনবুদ রা.
মদিনার বাইরে এসে সৈন্যদের যাচাই-বাছাই করা হলো। এ সময় সৈন্য বাহিনীতে অংশ নেওয়া অল্প বয়স্ক বালক ও কিশোরদের ফিরিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু রাফে ইবনে খাদিজ ও সামুরা ইবনে জুনবুদ নামের দুই কিশোর সাহাবি ফিরে যেতে রাজি হলেন না। ন্যায়ের পক্ষ নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার প্রবল আগ্রহ ছিল তাদের মনে।
রাসূল সা. যখন বললেন, রাফে তুমি ফিরে যাও, তোমার বয়স অনেক কম। তখন তিনি যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য কৌশল অবলম্বন করে পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে উঁকি দিয়ে দাঁড়ালেন, যেন তাঁকে লম্বা মনে হয়। এমন আগ্রহের কারণে তাঁকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হলো।
বীরত্বের পরীক্ষা ও প্রতিযোগিতা
তাঁর যুদ্ধে অংশ গ্রহণের অনুমতির বিষয়টি লক্ষ্য করে মদিনায় ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানালেন তার সমবয়সী কিশোর সাহাবি সামুরা ইবনে জুনবুদ রা.। তিনি বললেন, তাঁকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হলে আমাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুমতি দেওয়া উচিত। কারণ, আমরা দুজনে কুস্তিতে অংশ নিলে তাঁকে আমি ধরাশায়ী করে ফেলবো।
সামুরা রা.-এর দাবিমতো তাঁদের দুজনের জন্য কুস্তির আয়োজন করা হলো। কুস্তিতে সামুরা রা. রাফে রা.-কে সত্যি সত্যিই ধরাশায়ী করে ফেললেন। তখন তাকেও যুদ্ধে অংশগ্রণের অনুমতি দেওয়া হলো।
(সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া, ৭৭, তারিখে তাবারি)
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর