কোটা আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় জাতীয় পার্টির নেতা ও কাউন্সিলর জড়িত থাকলে, সেই ব্যক্তিদের দায় জাতীয় পার্টি এবং সিটি কর্পোরেশন নিবে না বলে জানিয়েছেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জাপার কো চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। সহিংসতার ঘটনায় জাতীয় পার্টির দুইজন নেতা ও দুইজন কাউন্সিলর গ্রেফতার হওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সহিংসতার ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে। এই বিষয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।
রোববার (২৮ জুলাই) দুপুরে সভা কক্ষে কোটা আন্দোলনের সময় সহিংসতায় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ক্ষতির পরিমাণ ও সমসাময়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিতকরণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি সহিংসতার ঘটনায় জড়িত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে নিরপরাধ সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থাকে অনুরোধ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেয়র বলেন, কোটা আন্দোলনের সময় দুষ্কৃতকারীদের হাতে থাকা লোহার রড, এসএস পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র ও ইট পাটকেল দ্বারা ভাঙচুর আরম্ভ করলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের বাধা দেয়াড় চেষ্টা করেন। এসময় দুষ্কৃতিকারীদের মারমুখী আচরণে নিরাপত্তাকর্মীরা পিছু হটলে তারা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপিত স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এসব ঘটনায় মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় একটি মামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৭টা রাত ১২টা পর্যন্ত দুস্কৃতকারীরা রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত মূল্যবান সম্পদের ধ্বংসসাধন করে। এতে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্থাপিত ৬৪টি সিসি ক্যামেরা, নগরজুড়ে আনুমানিক ৩০ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল, তিনটি এলইডি টিভি, নগর ভবনের প্রধান প্রবেশ ফটকে স্থাপিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ দুপাশে স্থাপিত চারটি সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তা প্রহরীর কক্ষ ও প্রশাসনিক ভবনের জানালার থাই গ্লাস, প্রধান ফটকের দুইপাশে অবস্থিত গার্ডেন লাইটসমূহ, ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের ক্ষতি হয়।
এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের ভবন থেকে লালবাগ রেল ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার মাঝখানে, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ফুট ওভার ব্রিজের নিচের দুইপার্শ্বে অবস্থিত ডিভাইডার প্রটেকশন গ্রিল এবং শাপলা চত্তরের গোল চত্তরের গ্রিলসমূহ, জাহাজ কোম্পানির মোড় ও লালকুঠি মোড়ে স্থাপিত ডিজিটাল ট্র্যাফিক সিগন্যাল, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের দুইটি এলইডি সাইনস বিভিন্ন সম্পদের ক্ষতিসাধন করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে রসিক মেয়র বলেন, সারাদেশে ইন্টারনেট তথা ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত এই পরিস্থিতির সুযোগে দুর্বৃত্তরা নাশকতা করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে। প্রতিবাদী শিক্ষার্থী এবং সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে এসব সহিংস ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরো বলেন, গত দুই সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসহ জানমালের যে ক্ষতি সাধন হয়েছে তা অপূরণীয়।
এসময় সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা, সচিব জয়শ্রী রানী রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আনিচুজ্জামান, প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান, সাবেক প্যানেল মেয়র ও বর্তমান কাউন্সিলর সামছুল আলম, ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু হাসান চঞ্চল, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর হাসনা বানু, ফেরদৌসি রহমান উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কোটা আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২ জন কাউন্সিলর ও জাতীয় পার্টির যুবসংহতি ও ছাত্রসমাজের নেতা গ্রেফতার রয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর