কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম আহ্বায়ক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১নং সম্পাদক আরিফ সোহেলকে তার নিজ বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ রবিবার ভোরের এ ঘটনার পর সর্বশেষ বিকেল ৫ টা পর্যন্ত তাঁর খোঁজ পায়নি পরিবার। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে কোনো তথ্য নেই বলা হচ্ছে।
আজ রোববার (২৮ জুলাই) ভোররাত ৩ টা ৫০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী আমবাগান এলাকার মনসুরনগর হাউজিং এস্টেটের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে একদল লোক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম এবং আরিফ সোহেলের পিতা আবুল খায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরিফ সোহেলের পিতা আবুল খায়ের জানান, ভোররাত রাত ৩টা ৫০ মিনিটে ৮-১০ জনের একদল লোক আমাদের বাসার দোতালায় এসে শুরুতেই সবার ফোন কেড়ে নেয়। পরে আরিফ সোহেল ও আমার বড় ছেলে মোহাম্মদ আলী জুয়েলকে কালো গ্লাসের মাইক্রোবাসে তোলে। এসময় আমরা আইডি কার্ড দেখতে চাইলে তারা আইডি কার্ড দেখায়৷ তাদের হাতে অস্ত্র ছিল। আইডি কার্ড ও তাদের আচরণ-কথাবার্তায় নিশ্চিত হই তারা ডিবি বা সিআইডির লোক৷
আবুল খায়ের আরও জানান, আমার দুই ছেলেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন জিজ্ঞেস করলে তারা আমাকে আশুলিয়া থানায় যোগাযোগ করতে বলে। ভোরে আশুলিয়া থানায় গেলে আমাকে থানায় ঢুকতেই দেয়নি। থানা থেকে জানায়, আশুলিয়া থানা থেকে এমন কোন অপারেশন পরিচালিত হয়নি। পরে আমি সাভার থানায় যাই। সেখানেও আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আমাকে অফিস আওয়ারে আসতে বলা হয়। পরে আমি সাভার সিটি সেন্টারের পেছনে ডিবি কার্যালয়ে যাই। তাদের অফিসটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাই৷
আবুল খায়ের আরও বলেন, আমি যখন থানায় খোঁজ নিচ্ছিলাম, ইতোমধ্যে আমার বড় ছেলে মোহাম্মদ আলী জুয়েলকে সাভারের গেন্ডা এলাকা থেকে ১০০ টাকা দিয়ে রিকশায় তুলে দেয় তারা৷ জুয়েল বাড়ি চলে আসে৷ ধারণা করছি আরিফ সোহেলকে ঢাকায় ডিবি বা সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
আরিফ সোহেলের ছোটবোন ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে খায়ের ঈদি জানান, ভোররাতে তুলে নেয়ার ঘটনা ও তার সন্ধান দাবি করে তারা ইতোমধ্যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য রাষ্ট্রের দূতাবাসে যোগাযোগ করেছেন।
আবুল খায়ের আরও জানান, আমি তৃণমূল থেকে একজন সিলেক্টেড মুক্তিযোদ্ধা। ২ নং সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের অধীনে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল থেকে আমাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর ডাকে গঠিত থানা সংগ্রাম পরিষদে আমি দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে প্রকাশিত 'মুজিববার্তা' পত্রিকার জয়েন্ট নিউজ এডিটর ছিলাম। পরে বঙ্গবন্ধু সরকারের অনুমতিতে আমি সোভিয়েত ইউনিয়নে উচ্চতর শিক্ষার জন্য যাই। তবে ফিরে এসে আমি কোন সরকারি চাকরিতে জয়েন করিনি৷
ছেলের সন্ধান দাবি করে পিতা আবুল খায়ের বলেন, আমার ছেলে তো অন্যায় কিছু করেনি। ছাত্রদের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে কথা বলেছে৷ আর জাহাঙ্গীরনগরে রাষ্ট্রীয় সম্পদের তেমন ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি। আমি আমার ছেলের সন্ধান ও নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, 'আমরা জাবি শিক্ষার্থীকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে আশুলিয়া থানায় এমন কাউকে নিয়ে আসা হয়নি।'
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর