রংপুরে স্মরণকালের ভয়াবহ নাশকতা ও তাণ্ডবের ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে। বিশেষ করে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন ও লুটপাটের ঘটনার পর শীর্ষ নেতারা দেখতে না আসায় ক্ষোভে ফুঁসছেন তারা। ১৪ বছরে ক্ষমতার স্বাদ নিয়ে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হওয়া আর পদ-পদবির জন্য মাঠে নামা নেতারা ‘যে গর্তে লুকিয়ে আছেন’ সেখানেই থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
অবশ্য গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কিছু নেতাকর্মী মাঠে নামায় কিছুটা তান্ডব কম হয়েছে বলে দাবি করেছে নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, গত (১৮ জুলাই) বিকেল ৪ টার দিকে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে শুরু হয় তান্ডব ও নাশকতা। ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয় রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও।
একইসঙ্গে রংপুর নগরীর তাজহাট থানা, উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, জেলা ছাত্রলীগ ও মহানগর শ্রমিকলীগ কার্যালয় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। নগরীর জাহাজকোম্পানি মোড়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি যানবাহন।এছাড়াও ১৯ জুলাই (শুক্রবার) নগরীর আরও বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তান্ডব চালানো হয়।
এর আগে ১৮ জুলাই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তান্ডব ও অগ্নিযোগের পরপরই অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী নাশকতা কারীদের ধাওয়া দেয়।পরে নেতাকর্মীরা কোতোয়ালি থানার সামনে অবস্থান নেয়।
এছাড়াও ঘটনার পর দলীয় কার্যালয় ছুটে আসেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হাতে গণা কয়েকজন নেতাকর্মী । এর মধ্যে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ইদ্রিস আলী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাড. আনোয়ারুল ইসলাম,সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য নাছিমা জামান ববি,জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু,মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাফিয়ার রহমান,সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রামানিক,জেলা যুবলীগের সভাপতি লক্ষিণ চন্দ্র, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি,মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী তুহিন,মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা আরমান,আ'লীগ নেতা শাহাদাৎ হোসেন,রফিকুল আলম,নওশাদ মিয়া সহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তবে ঘটনার দুই দিনেও দলীয় কার্যালয়ে আসেননি রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
দলের ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা বলেন, যারা গর্তে লুকিয়ে আছেন, আশা করবো তারা সেখানেই থাকবেন। পরিবেশ-পরিস্থিতি ভালো হওয়ার পর মাঠে নামলে তাদের লজ্জিত হতে হবে আমাদের কাছে।
এদিকে ঘটনার সাত দিন পরে মামলা করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। দেরিতে মামলা করায় তৃণমূলে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মহানগরে মামলা করেছেন দলের যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাশেম এবং জেলার পক্ষে মামলা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা জিন্নাত হোসেন লাভলু। মহানগরে ৭১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকশ জনকে আসামি করা হয়। জেলায় ৬৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকশ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার সাত দিনেও মামলা না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে দলের অনেককে মন্তব্য করতে শোনা গেছে- জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নিজেদের কোন্দলে জর্জরিত। তাই নেতারা বাদী হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাফিয়ার রহমান বিডি২৪লাইভকে বলেন, আমার মনে হয় ক্ষমতার সুবিধা নিয়ে কারা দেশের এমন ক্রান্তি লগ্নে ঘুমিয়ে আছেন আর এই চরম মুহূর্তেও বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তাদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে। দলের সাংগঠনিক ভিত্তিকে গোছানো ও মজবুত না করতে পারলে সামনে এর চেয়েও বেশি ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, শীর্ষ নেতারা জানতো দলীয় কার্যালয়ে হামলা হতে পারে।কিন্তু তাঁরা কর্মীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান না নিয়ে কৌশলে পার্টি অফিস ত্যাগ করেছে।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন এসে এ তান্ডব চালিয়েছে।আর আমাদের উপজেলার নেতাকর্মীরা স্ব স্ব উপজেলায় অবস্থান নিয়েছিল।তবে আমরা সেদিন দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিলে নাশকতা কারীরা এ তান্ডব চালাতে পারতো না।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম বিডি২৪লাইভকে বলেন, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলাম।আমরা চলে আসার পরপরই হামলা হয়েছে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর