
যৌতুকের টাকা না পেয়ে প্রথমে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নির্যাতন, এরপর অনাগত সন্তানকে হত্যা ও স্ত্রীকে ডিভোর্স নোটিশ পাঠালেন স্বামী। দাবি করা ১০ লাখ টাকা না পাওয়ার ক্ষোভে মা-বাবা ও বোন-ভগ্নতিপতির যোগসাজশে বিয়ের ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই এমন কাণ্ড করেছেন স্বামী ইমরান আলী (২৭)। এ নিয়ে হতাশায় জীবন-যাপন করছে ভুক্তভোগী স্ত্রী ও তার পরিবার। এ ঘটনায় স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ ছয়জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেছেন স্ত্রী রিতু আক্তার (২৫)।
মামলার আসামিরা হলো- ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খোচাবাড়ি কিসমত দৌলতপুর গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে ইমরান আলী (২৭), মৃত গাজার মোহাম্মদের ছেলে ইউসুফ আলী (৬০), ইউসুফ আলীর স্ত্রী গুলবাহার বেগম (৫৫), ইউসুফ আলীর বড় মেয়ে শ্যামা বেগম ( ৩৬) ছোট মেয়ে সাথী বেগম (৩২) ও দুই জামাতা মেকলেছুর রহমান ও আবু ছালাম।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৬ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কিসমত দৌলতপুর গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে ইমরান আলীর সঙ্গে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা থানার পশ্চিম বেজগ্রাম এলাকার আমিনুর রহমানের মেয়ে রিতু আক্তার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর স্বামী-স্ত্রী দুজনই স্ত্রীর বাবার বাড়িতে বসবাস করতেন। বিয়ের সময় মেয়েকে ৩ লাখ টাকার স্বর্ণের গহনা ও জামাইকে আড়াই লাখ টাকা মূলে একটি মোটরসাইকেল প্রদান করেন। চাকুরি করার কারণে বিয়ের কয়েক মাস পর স্বামী-স্ত্রী রংপুর মহানগর দেওডোবা ডাঙ্গী এলাকায় জনৈক নাঈমের বাসায় ভাড়া ওঠেন।
এমতাবস্থায় তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হন। এর একপর্যায়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ইমরান তার স্ত্রীর কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা না পেলে স্ত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্ট এবং তাকে তালাক দিবে বলে হুমকি দেয়।
স্বামীর দাবি না মানায় অসুস্থ স্ত্রীর ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। দিনের পর দিন মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের মাত্রা বাড়তেই থাকে। এরপর চলতি বছরের ৪ এপ্রিল ইমরানসহ বাকি আসামিরা রংপুরের ভাড়া বাসায় একত্রিত হয়ে ১০ লাখ টাকার জন্য রিতুকে চাপ দেন।
রিতু টাকা দিতে অস্বীকার করায় অনাগত বাচ্চা নষ্ট ও প্রাণনাশের হুমকি দেয় আসামিরা। পরে দোকান থেকে এমএম কীট নামক ৫টি ট্যাবলেট জোরপূর্বক মুখে ঢুকাই দিয়ে মুখ চেপে রাখে তারা। প্রচণ্ড পেটের ব্যথা ও রক্তপাতের মাধ্যমে তার গর্ভপাত ঘটে। পরে তার স্বামী ছাড়া বাকি আসামিরা পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে রিতু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য রংপুর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাঃ আজিজা বেগম (লুসি)'র চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেন। পরদিন আবারো ১০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য স্ত্রী রিতুকে তার বাবার বাড়ি লালমনিরহাটে পাঠায় দেয় স্বামী ইমরান। এসময় বলে ১০ লাখ টাকা ছাড়া আমি সংসার করবো না। পরে কোনো উপায় না পেয়ে ১৪ জুলাই লালমনিরহাট বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন রিতু আক্তার। মামলা করার পর থেকে স্ত্রীর ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে ইমরানের পরিবার ও তার বন্ধুবান্ধবেরা।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী রিতু আক্তার বলেন, আমরা দুজনেই প্রেম করে বিয়ে করেছি। তার পরিবার আমাদের বিয়ে মেনে না নেয়ায় আমরা বাবার বাড়িতে থাকি। দুজনই শিক্ষিত হওয়ায় দাম্পত্য বিষয় নিয়ে শঙ্কা ছিল না। পরে রংপুরে ভাড়া বাসায় উঠি। সংসারে যাবতীয় আসবাবপত্র আমার বাবা কিনে দেন। এভাবেই চলছিলো আমাদের সংসার। একদিন ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সে। আমি এতো টাকা বাবার কাছে থেকে আনতে পারব না বলে আমাকে মারধর করে এবং তার মা-বাবা-বোনরা আমার গর্ভে সন্তানকে হত্যা করে। পরে আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলে ডিভোর্স নোটিশে পাঠায়। আমি অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাঁর একটাই কথা ১০ লাখ টাকা ছাড়া সে সংসার করবে না।
তিনি আরো বলেন, আমি কোনো উপায় না পেয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। আদালতের কাছে আমার অনাগত সন্তানকে হত্যা এবং আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সকল অন্যান্যের বিচার চাইছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইমরান আলী ও তার বাবা ইউসুফ আলীসহ অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আদালতে একটি মামলা করেছে ভুক্তভোগী রিতু আক্তার। পরবর্তীতে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর