
কক্সবাজারে পৃথক দুটি হত্যা মামলায় চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। তৎমধ্যে মহেশখালী মাতার বাড়িতে রব্বত আলী হত্যা মামলায় তিনজন এবং রামু উপজেলার পানিরছড়া মামুন বাজার এলাকায় খোরশেদ আলম বাবুল হত্যা মামলায় একজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক মোশারফ হোসাইন পৃথক এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোজাফফর আহমেদ হেলালী তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এসটি ২০৫/২০০৩ এবং এসটি ৪২/২০০০- এ দুটি মামলায় বিজ্ঞ আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেন। একই সাথে তিনজনের প্রত্যেককে দুই লাখ এবং অপর মামলার আসামিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত এ রায় দেন বলে উল্লেখ করেন এপিপি।
এপিপি হেলালি আরো বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ১৯৯৫ সালের ৪ মার্চ কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে ছোটভাইয়ের নির্দেশে খুন হন রব্বত আলী নামে এক দিনমজুর। এ ঘটনায় নিজেকে আড়াল করতে পরের দিন ৫ মার্চ ৪১ জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের ছোটভাই জালাল আহমেদ। ২০ মার্চ নিহতের ছোটভাই ও মামলার বাদী জালাল আহমেদকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি ফৌজদারি দরখাস্ত করেন নিহতের স্ত্রী জুবাইরা বেগম। বিজ্ঞ আদালত মামলা দুটি সিআইডির সিনিয়র অফিসার দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিআইডি পুলিশ পরিদর্শক করিম গণি ২০০২ সালের ১৬ জানুয়ারি নিজে বাদী হয়ে জালাল আহমেদকে প্রধান করে ৫ জনকে আসামি করে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (জিআর ৮/২০০২-পরবর্তীতে এসটি ২০৫/২০০৩)। একই দিন তাদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) জমা দেন।
মামলার আসামিরা হলেন, জালাল আহমেদ, আব্দুল মালেক, শামসুল আলম, করিম দাদ এবং আব্দুল মুনাফ। এরই মধ্যে মামলার প্রধান আসামি জালাল আহমেদ ও আব্দুল মালেক মারা যান। বিজ্ঞ আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) তিনজনকে ফাঁসির আদেশ দেন। এবং দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। মৃত দুইজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম (৪) রায়ে তারা সন্তুষ্ট নয় জানিয়ে উচ্চ আদালতে আপিলের কথা জানান।
একই দিন, রামুর পানিরছড়ায় খোরশেদ হত্যা মামলার রায়ে শেরে ফরহাদ নামে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন একই বিচারক। একই সাথে এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শওকত বেলাল তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ১৯৯৫ সালে ২০ ডিসেম্বর রামু উপজেলার পানিরছড়া মামুন বাজার এলাকায় যাত্রীবাহী টেক্সির ভাড়াকে কেন্দ্র করে চাচাতো ভাই শেরে ফরহাদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন খোরশেদ আলম বাবুল। নিহত বাবুল ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ভূঁয়ার ছেলে। একইদিন নিহতের পিতা আবুল কাশেম বাদী হয়ে শেরে ফরহাদ ও তার পিতা সিরাজুল ইসলামকে আসামি করে রামু থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা রামু থানার তৎকালীন এসআই মোহাম্মদ মোস্তফা দুইজনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন (চার্জশিট) জমা দেন (থানা মামলা নং ০৮/১৯৯৫, পরবর্তীতে জিআর ১৪৯/৯৫ এবং এসটি ৪২/২০০০)। দীর্ঘ শুনানি ও ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে বিজ্ঞ আদালত মঙ্গলবার শেরে ফরহাদের ফাঁসির আদেশ দেন। একই সাথে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। অপর আসামি মৃত্যুবরণ করায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
রায় ঘোষণার সময় আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী নাছির উদ্দীন ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়েছেন দাবি করে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে উল্লেখ করেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর