
বন্ধুকে এয়ার পোর্টে দিয়ে ফেরার পথে পুলিশের হাতে আটক হন ধামরাই মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো: মিরাজ হোসেন (১৮)। তার অপরাধ সে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছবি তুলেছিলো। আর সে ছবি মোবাইলে থাকার অপরাধে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে বসে থাকা মেরাজের বড় বোন রাশিদা এমনটি জানান।
গার্মেন্ট সুপার ভাইজার ফুপাতো বোন রাশিদা জানান, গত ২৪ তারিখ রাতে সাভার এলাকা থেকে মিরাজের বন্ধু ও তার দুই স্বজনকে নিয়ে এয়ার পোর্টে যায়। বন্ধুকে পৌঁছে দিয়ে মিরাজসহ তিনজন সাভার ফেরার পথে রাত তিনটার দিকে আমিনবাজার এলাকায় পুলিশের চেক পোস্টে গাড়ি থামিয়ে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও সবার মোবাইল ফোন চেক করে।
এসময় মিরাজের মোবাইলে আগের দিন তোলা সাভার এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষারর্থীদের ছবি পায় পুলিশ। পরে মিরাজের সাথের দুজনকে ছেড়ে দিলেও মিরাজের মোবাইলে ছবি থাকার কারণে তাকে আটক করে সাভার থানায় নেয়া হয়। খবর পেয়ে ২৫ তারিখ সকালে সাভার থানায় গিয়ে অনেককে অনুরোধ করেও ভাইকে ছাড়াতে ব্যর্থ হন তিনি। ভাইকে থানা থেকে ছাড়াতে দালালকে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েও কোন কাজ হয়নি।
রাশিদা বলেন,“ আমার মামা একজন অসহায় রিকশা চালক। বৃদ্ধ বয়সে অনেক কষ্ট করে একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া করান। একবেলা রিকশা না চালালে ভাড়া বাসায় থাকা পাঁচ সদস্যের সংসার চলেনা। এদিকে আমি নিজে গার্মেন্টে কাজ করি। থানা পুলিশে দৌড়ানোর মত কেউ না থাকায় আমি ২৫ তারিখ থেকে কোর্ট কাচারি আর জেল খানার সামনে দৌড়াচ্ছি।
এখন বুঝি আমার চাকরিটাও আর থাকবেনা। আজ সকালে আদালত থেকে ওকালতনামা নিয়ে সই করানোর জন্য গেটে জমা দিয়েছি। এখন বিকাল পাঁচটা বাজে ওকালতনামা এখনও ফেরত আসেনি। মিরাজের নামে এর আগে কোন মামলা ছিল না। ছবি তোলার দায়ে একাধিক মামলার আসামি আমার ভাই। আজ পর্যন্ত দেখা করতে পারিনি। গেটে নাম লিখে টাকা দিয়েছি সেটা পেয়েছে কিনা তাও জানি না।”
কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে সকাল থেকে বসে থাকা আবুল কাসেম জানান, গত ২২ জুলাই রাজধানীর গোলাপবাগ এলাকায় একটি মেসবাসা থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় তার বোনের ছেলে রাকিব (১৬) কে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। রাকিব ঢাকা ওয়াসা'র এক ঠিকাদারের সাথে শ্রমিকের কাজ করেন। কাজ শেষে বাসায় ৯ শ্রমিকের সাথে ঘুমন্ত অবস্থায় সবাইকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। কাসেম তার বোনের ছেলের ওকালত নামা সই করার জন্য বসে আছে।
গত কয়েকদিন ধরে ওয়ারি এলাকা থেকে ২৪ শে জুলাই গ্রেফতার হওয়া রাজধানীর নবাবপুরে ইলেকট্রিক দোকানে কর্মচারী সোহানের মা সোমা বেগম,২৬ শে জুলাই কদমতলী এলাকার রায়েরবাগে সেনেটারী কারখানার কর্মচারী ইমাম হোসেন গ্রেফতার হওয়ায় তার বড় বোন হামিদ আক্তার সহ এমন শতশত মানুষের ভিড় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে।
ওকালতনামা সই করা নিয়ে জটিলতায় ক্ষুব্ধ বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনরা। তাদের দাবি সরকার বন্দীদের সাথে দেখা করা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন ওকালতনামা সই করে দ্রুত তাঁদের জামিনের ব্যবস্থা করব সেটাও হচ্ছে না। অনেক নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আটকে আছে কারাগারে আর তাদের নিয়ে বাণিজ্য শুরু করেছে একটি দালাল চক্র। তারা কারারক্ষীদের মাধ্যমে কারাগারের ভিতরে টাকা পৌঁছে দিয়ে আসবে ও ওকালতনামায় সই করিয়ে দিবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দী হওয়ায় বুধবার সকালে বেশ কয়েকটি প্রিজন ভ্যান ভরে বন্দীদের কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয় জানতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বন্দিদের সাথে সাক্ষাৎ জেলখানার নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ওকালতনামায় সই করা নিয়ে জটিলতার বিষয়টি সঠিক নয়। আমাদের কাছে কাগজ আসার সাথে সাথেই আমরা বন্দিদের খুঁজে বের করে আদালতে নামায় স্বাক্ষর করিয়ে দিচ্ছি। তবে অতিরিক্ত বন্দি থাকায় কিছুটা সময় লাগছে। কোটা আন্দোলনে আটক বন্দিদের মধ্যে কেউ জামিনে ছাড়া পেয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর